২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

প্রিয়তমা অন্তঃসত্ত্বা রিয়াকে একা মরতে দেননি রিফাত

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:৫০ অপরাহ্ণ, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজধানীর চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের ‘ওয়াহিদ ম্যানশন’ ভবনে রিফাত-রিয়া সাজিয়েছিলেন স্বপ্নের সংসার।ভবনটির তৃতীয় তলায় থাকতেন এই দম্পতি। সংসারে নতুন অতিথি আসবে বলে সবকিছু নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেলেন তারা। অন্তঃসত্ত্বা রিয়া ছিলেন অসুস্থ। চলাফেরায় কয়েকদিন ধরে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল তার।

বুধবার গভীর রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি বাড়িতে আগুন লাগলে তা আশেপাশের বাড়িঘরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে দত্ত রোডে যে ভবনে রিফাত-রিয়া থাকতেন সেখানে আগুন পৌছাতে পৌছাতে বেশ খানিকটা সময় নেন। ওই ভবনের অন্য বাসিন্দারা আগুনের লেলিহীন শিখা সেখানে পৌছানোর আগেই নিরাপদে সরে যান।

আগুন লাগার পর রিফাত-রিয়ার দম্পতিরও নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সন্তানসম্ভবা রিয়া অসুস্থতায় তা সম্ভব হয়নি। দৌড়ঝাঁপ দিয়ে দ্রুত সরে যাওয়ার অবস্থায় ছিলেন না তিনি। তবে রিয়াদ চেষ্টা করলে অন্যদের মতো নিরাপদে সরে যেতে পারতেন, বাঁচাতে পারতেন নিজের জীবন। কিন্তু প্রিয়তমা স্ত্রী আর তার গর্ভে থাকা সন্তানকে রেখে কীভাবে পালাবেন তিনি! আগুনের লেলিহার শিখার দিকে হয়তো বুক পেতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। যদি ওই বুকে আগুন থেমে যায়! যদি তার স্ত্রী আর অনাগত সন্তান বেঁচে যায়! কিন্তু নিয়তি তিনজনকেই পুড়িয়ে দিলো। স্ত্রীর সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন রিফাত।

যে পরিবারটি নতুন অতিথি আসার কথা ছিল, ওরা আজ পুড়ে কয়লা। চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে ৭৮টি পোড়া দেহ। এদের বেশিরভাগের চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। এই লাশের মিছিলেই আছেন রিফাত এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিয়া। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এ দম্পতির স্বজনরা। ছিলেন তাদে প্রতিবেশীরাও। কেউিই তারা মরদেহ শনাক্ত করতে পারছিলেন না। তারাই বলাবলি করছিলেন মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি।

বৃহস্পতিবার এসে গণমাধ্যমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে রিয়া ও রিফাতের মরদেহ শনাক্ত করতে এসব তথ্য জানান তারা।

রিয়াদের ঘণিষ্ঠ বন্ধু সাজিদ জানান, রিয়া ও রিফাত দুই বছর আগে বিয়ে করেন। তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। চেহারা দেখে মরদেহ শনাক্ত করার উপায় নেই।তিনি আরও জানান, আগুন লাগার পর রিফাতের পরিবারের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু রিয়াকে নিয়ে নামতে পারছিল না বলেই সে নিজেও নামেনি। ফলে দু’জনই পুড়ে মারা গেছেন।

রিয়া ও রিফাতের মৃত্যুর খবরে তাদের পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই ঘটনাস্থলে আসতে পারেননি তারা। এপর্যন্ত সনাক্ত হওয়া মরদেহগুলোর মধ্যে নেই রিয়া ও রিফাত।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন