৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

আহমেদ মুন্না’র কলাম: ২৫ জুন আরেকটি বিজয় দিবস

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৩ অপরাহ্ণ, ২৪ জুন ২০২২

আর মাত্র ২৪ ঘন্টা পরেই একটি বিজয় দিবস উদযাপন করবে বাঙালি জাতি। ২৫ জুন বাঙালির অর্থনৈতিক বিজয় অর্জনের দিবস। স্বাবলম্বী হওয়ার দিবস। আত্মমর্যাদা ও গৌরবের দিবস। তলাবিহীন ঝুড়ির দুর্নাম থেকে দেশকে মুক্ত করার দিবস।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়েছিল। সেই দিনটি ছিল ভূখণ্ডকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে মুক্ত করার বিজয় দিবস। সেই মুক্তি অর্জনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ঠিক তেমনি ২০২২ সালের ২৫ জুন আরেকটি বিজয় দিবস। এবার সেই ভূখণ্ডের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের বিজয় উৎসব পালন করবে জাতি। এই অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, দৃঢ়চেতা, অসীম দুঃসাহসী ও চরম আত্মবিশ্বাসী এক নারী। সেই জীবন্ত কিংবদন্তির নাম শেখ হাসিনা।

অর্থ বরাদ্দের আগে দুর্নীতির কথিত অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের দেখাদেখি অন্যান্য দাতা সংস্থাও সেদিন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সেদিন দেশের জ্ঞানী-গুণী, অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী কেউ বিশ্বাস করেনি কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া এদেশে পদ্মা সেতু হতে পারে কিংবা কখনো হবে। তবে একথা বিশ্বাস করেছিলেন শুধু একজন। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা যখন রাগে এবং ক্ষোভে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলেন সেদিন তাকে কটাক্ষ করেছিলেন প্রায় সবাই। কেউ বলেছিলেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু মানে আকাশকুসুম কল্পনা, কেউ বলেছিলেন স্বপ্নবিলাসী হাসিনার অলীক স্বপ্ন, কেউ বলেছিলেন ভোট পাওয়ার জন্য এই ঘোষণা একটা পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি। তবে সব নিন্দা, সমালোচনা আর উপহাসকে পায়ে মাড়িয়ে পদ্মা সেতুর যখন নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা তখনও এটা নিয়ে কম ষড়যন্ত্র হয়নি।

শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি পদ্মা সেতুর যখন পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় তখন সেখানে বাচ্চাদের কাটা মাথা দরকার এবং পিলার ঢালাই কাজে মানুষের তাজা রক্ত লাগার গুজব ছড়িয়ে দিয়ে দেশে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই গুজবকে বিশ্বাসযোগ্য করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ বেশ কয়েকটি মস্তকবিহীন লাশ ফেলা হয়েছিল। এরপরে সেই গুজবের রেষ ধরে স্কুলে বাচ্চার ভর্তির খবর নিতে যাওয়া রেনু বেগমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক নিরপরাধ মানুষকে বাচ্চাধরা সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

কিন্তু এরপরেও পদ্মা সেতুর কাজ থেমে থাকেনি। পদ্মার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাঙালির এক অবিস্মরণীয় গৌরবের বিজয়গাঁথা। আর মাত্র একদিন পরেই ২৫ জুন এই অর্থনৈতিক বিজয় দিবসের উৎসবে খোলা হচ্ছে সেই স্বপ্নের দুয়ার পদ্মা সেতু। একসময়ে সবার কাছে যেটা ছিল আকাশকুসুম কল্পনা সেটাই আজ দৃশ্যমান চরম বাস্তব। যে যা-ই বলুক, এই স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন নিয়ে বাঙালির আবেগ, উচ্ছ্বাস, উন্মাদনা একটু বেশি থাকবেই। তাই এই ঐতিহাসিক দিনটিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

লেখাঃ আরিফ আহমেদ মুন্না
সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও মানবাধিকারকর্মী।
বাবুগঞ্জ, ২৪ জুন, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।

24 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন