৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

এক জসিমকে দমাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাসের সিরিজ ষড়যন্ত্র!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, ২০ এপ্রিল ২০২১

এক জসিমকে দমাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাসের সিরিজ ষড়যন্ত্র!

হাসিবুল ইসলাম >> ছাত্রলীগ নেতা জসিম স্বাধীনচেতা এক তরুণ। মুজিবপ্রেমী এই তরুণকে রাজপথে দেখেছি খুব কাছ থেকে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে কাপিয়েছেন রাজপথ। তৎসময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক পিঠস্থল বরিশালে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শিবির ও ছাত্রদলের একক আধিপত্য। সেই পাকপন্থীদের প্রতিরোধে নেমে একাধিক হামলা-মামলার শিকার হলেও জসিম উদ্দিনকে পিছু হঠতে দেখিনি। বরং নিজের তৈরি বলয় নিয়ে মোকাবেলা করেছেন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে। বিস্ময়, স্বদলীয়রা তাকে সেই সময়ও টেনে ধরার একের পর কৌশল নেয়। কিন্তু শেষাবধি তাদের সেই মিশন বাস্তবে রুপ নেয়নি। নিজ দলীয় সেই গোষ্ঠীবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারীসহ শিবির-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে একাই লড়াইছেন। পরবর্তীতে ওয়ান ইলিভেন সরকারের আমলেও তাকে দৈবশক্তি নিয়ে রাজপথে লড়াই করতে দেখেছি। অবশ্য দুর্দিনে তাকে ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছিলেন পিতৃতুল্য শওকত হোসেন হিরণ। বিপরিতে জসিমও নেতৃত্বের পাশাপাশি পরীক্ষায় একটা সময় হয়েছিলেন নেতার আস্থাভাজন। নেতা শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হয়ে মাঠে নামলে আরও এক দফা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে ত্রিশোর্ধ্ব এই ছাত্রলীগ নেতাকে।

মেয়র নির্বাচনে শওকত হোসেনের জয়লাভের পর কিছুটা স্বস্তি জসিম পেলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগের কমিটিতে তার পদপ্রাপ্তি নিয়ে যখন ঢের আলোচনা, বিপরিতে নিজ ঘরনায় একের পর এক ষড়যন্ত্র জসিমকে আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। নেতা শওকত হোসেন হিরণের শক্ত ভুমিকায় সেই দফাও জসিমকে টেনে ধরে রাখতে পারেনি। বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন তিনি। তখন মঈন তুষার, আব্দুর রাজ্জাকও তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা। সনটা সম্ভবত ২০১১। আমি তখন শাহ মোহম্মদ হোসেন শাহ্ প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ‘বাংলার বনে’ পত্রিকায় কাজ করি। পদপ্রাপ্তির খুশির সংবাদ নিয়ে জসিম কোনো এক সন্ধ্যায় এসেছিলেন জর্ডন রোডের পত্রিকা অফিসটিতে। যদিও জসিমের সাথে আমার চেনা-পরিচয় বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ার সুবাদে, একটা সময় তা বন্ধুত্বে রুপ নেয়। সেই সময় সাহসী জসিমের সাথে ক্ষমতার লড়াইয়ে বিরোধীরা না পারলেও দলের একটি অংশ চেয়েছিল নানা ঘটনায় বিতর্কিত করতে। এবং চেয়েছিল লাগাম টেনে ধরতে। এর পরে সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সান্নিধ্যে থেকে কিছুটা নিরাপদ থাকলেও নিরব ষড়যন্ত্র চলছিল অন্তত বিতর্কিত করে ছাত্রলীগ সভাপতির পদটি থেকে সরিয়ে দিতে।

যদিও শেষপর্যন্ত সেই ষড়যন্ত্রও ধোপে টেকেনি। সিটি নির্বাচনে বিএনপিপন্থী মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেতা শওকত হোসেনের পরাজয়ে উল্লাসিত স্বদলীয়রা ফের জসিম নিয়ে শুরু করে নোংরা রাজনীতি, কিন্তু সেখানেও হয়েছে ব্যর্থ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিরণ যখন এমপি নির্বাচিত হলে সেই কুটকৌশলও একটা পর্যায়ে থেমে যায়। কিন্তু বিধিবাম। একই বছরের মাঝামাঝি সময়ে নেতা হিরণে মৃত্যু এ যেন নিজ ঘরনার শত্রুভাবাপন্নদের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেয়।

নেতাকে চির বিদায় জানানোর কয়েকদিনের মাথায় জসিম-তুষারকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে ফের ওই গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাসের একের পর এক ষড়যন্ত্রের ছক। শেষ পর্যন্ত দমাতে না পেরে বেশ কয়েকটি মামলাও লটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুতে শূন্য বরিশাল সদর আসনে উপনির্বাচনে তার পত্নী জেবুন্নেছা আফরোজের অংশগ্রহণ এবং ভোটে জয়লাভের নেপথ্যে এই জসিম-তুষার তখন ব্যাপক ভুমিকা রাখলেও পরবর্তীতে তাদের রাজপথে বিরোধী এবং স্বদলীয় শত্রুদের সাথে একাই লড়তে দেখা যায়।

হামলা-মামলায় জর্জরিত জসিম-তুষার তবুও রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন। পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়েছেন। বলা বাহুল্য যে, তরুণ উদীয়মান এই দুই রাজনৈতিক মাঠ দখল রাখতে গিয়ে যতটা না বিরোধী দল দ্বারা নিপিড়িত বা নির্যাতিত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন স্বদলীয়দের কাছে থেকে। তবুও তাদের রোহিত করা যায়নি, দৃঢ়চেতা মনবল নিয়ে তেজদীপ্ত জসিম ছিলেন নীতিতে অবিচল।

জেবুন্নেছা আফরোজের এই আসনে ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম জয়লাভ করেন। নির্বাচনের পুর্বাপর জসিম এই নেতার সাথে থাকলেও বস্তুতপক্ষে রাজনীতির মাঠে তাকে কোনঠাসা করে রাখে গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাস। এরপর নেতৃত্বের জায়গায় থেকে জসিম ঘুরে দাড়াতে না পারলেও ইমেজ ধরে রেখেছিলেন এবং নীতিতে ছিলেন অটল।

সেই ত্যাগী উদীয়মান জসিমকে টলাতে বা তাদের শিবিরে ভিড়তে না পেরে একের পর সিরিজ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নানা মহলকে ব্যবহার করা হয়, অন্তত তাকে বিতর্কিত করে সভাপতির পদটি থেকে হঠাতে।

কৌশল হিসেবে, চলতি বছরের ১৭ মার্চ সন্ধ্যারাতে বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোডের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে দায় তার ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। মিডিয়াকর্মীদের অনুসন্ধান এবং পুলিশের তৎপরতায় উঠে আসে হামলাকারী কারা এবং এর নেপথ্যে কাদের ইন্ধন রয়েছে। ফলে এ দফায়ও জসিমকে আটকাতে পারেনি।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়, সর্বশেষ এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অভিযোগ আনা হলো, যা সংগঠনের ইজ্জত নিয়ে টান দিয়েছে। এক তরুণীকে হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের জেরে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেছেন এমন একটি নেতিবাচক খবর সামনে আসে। পুলিশ বিষয়টি তদন্তধীন বললেও স্বদলীয় এক নেতার কর্মীরা জসিমের বিরুদ্ধে কোমড় বেধে মাঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম করে তোলে। নিজ ঘরের শত্রুভাবাপন্নদের অতিউৎসাহী হয়ে অপপ্রচার ও অভিযোগকারী তরুণীর ছবি ছড়িয়ে দেওয়া নিয়েও নানান প্রশ্নে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীর ছবি প্রকাশ-প্রকাশের ক্ষেত্রে আইনের বাধ্য বাধকতা থাকলেও গোষ্ঠীবদ্ধ চক্রটি তোয়াক্কা করেনি।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তরুণী ও জসিমের যে সকল ছবিসমূহ ফেসবুকে পোস্ট করা হচ্ছে, তা নিবিড় পর্যবেক্ষণ ভিন্ন কিছুর আলামত দিচ্ছে। অনেকেই ছবিগুলো এডিট করে জুড়ে দেওয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জসিমের দাবিও এমনটি।

তবে জসিম যে ‘ধোয়াতুলসিপাতা’ আপাতত পুলিশী তদন্তের আগে সেটিও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানা পুলিশ তরুণীর অভিযোগটি ইতিমধ্যে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। পুলিশের দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি নিয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো প্রকার মন্তব্য না করলেও সিরিজ ষড়যন্ত্রের অংশ যে এখানেও বিদ্যমান তা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন।

এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, হ্যা জসিম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। কিন্তু তরুণীর অভিযোগটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি। অন্তত দায়িত্বশীল পুলিশ মহলের কাছে অনুরোধ থাকছে, জসিম যদি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত না থাকে বা তরুণী নিপিড়িত না হন, তাহলে নেপথ্য সিরিজ ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ এবার উন্মোচন করা হোক।

একজন উদীয়মান তরুণ ছাত্রলীগ নেতাকে দমাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাসের সিরিজ ষড়যন্ত্রের কাহিনী বরিশালবাসী তথা গোটা বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করুক জানুক। জসিমের মত সংগ্রামী ছাত্রনেতারা স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ্য স্থান না পেলেও যেন কেউ ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ না নেয়।

কলাম লেখক
হাসিবুল ইসলাম, সভাপতি ‘নিউজ
এডিটরস্ কাউন্সিল, বরিশাল।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন