৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

কক্সবাজার সৈকতে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ণ, ১২ জুলাই ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে হঠাৎ জোয়ারের পানিতে বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল তীরে এসে জমেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে কোথা থেকে এলো তা কেউ জানাতে পারেনি ভেসে আসা বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য, ছেঁড়া জাল ও সামুদ্রিক কাছিম নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ।

সৈকতের কলাতলীর সায়মন বিচ থেকে দরিয়ানগর পর্যন্ত এলাকায় স্তূপ হয়ে থাকা আবর্জনা ও বর্জ্য কোথা থেকে এলো তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, সৈকত তীর পরিষ্কার করছেন কর্মীরা। এসব বর্জ্যের তেজষ্ক্রিয়তায় অনেক সামুদ্রিক কাছিম মারা গেছে। অজ্ঞান হয়ে তীরে এসে ভিড়েছে আরও অনেক কাছিম। অজ্ঞান কাছিমগুলো উদ্ধার করে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় অধিবাসী রাশেদুল আলম রিপন বলেন, শুক্রবার বিকেলে স্থানীয়রা কলাতলী বিচের বেলি হ্যাচারি এলাকায় ফুটবল খেলেছে। সন্ধ্যার পর সবাই বাড়ি ফিরে যায়। তখনও সেখানে কিছু ছিল না। কিন্তু শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জোয়ারে সমুদ্র উপকূলের দিকে ভেসে আসে মদের বোতল ও প্লাস্টিক বর্জ্য। রাত বাড়ার সঙ্গে তীরে ভেসে এসে জমে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদের বোতল, প্লাস্টিক বর্জ্য ও ছেঁড়া জাল। এসব জালে পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে সামুদ্রিক কাছিম। আবার কিছু কাছিম অজ্ঞান অবস্থায় সৈকতের তীরে জড়ো হয়েছে।

সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা স্থানীয় আবদুর রহিম, লিয়াকত আলী ও ইব্রাহিমসহ অনেকেই জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে আমরা দেখেছি বিশাল জাহাজে করে নানা ধরনের মাছ শিকার করা হয়। জাহাজে অবস্থান করা ব্যক্তিরা বিদেশি। যারা মদসহ নানা মাদক সেবন করেন। সেসব জাহাজে গৃহস্থালি নানা ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের জাহাজ একটি নয়, অসংখ্য। এসব জাহাজে অবস্থান করা লোকজন খাওয়ার পর মদের বোতলসহ অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস গার্বেজে জমা রাখে। আমাদের ধারণা, হয়তো তারাই আবর্জনাগুলো জোয়ারের আগে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়। সেগুলো জোয়ারের তোড়ে তীরে এসে জমেছে।

ইনানীর মনখালী এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বর্ষায় পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নানা ধরনের আবর্জনা সৈকতে নামে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যে আবর্জনা এখন এসেছে এগুলো মানবসৃষ্ট। মদ খাওয়া লোকজন তাদের বর্জ্যগুলো অমানবিকভাবে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছে। মিয়ানমার জলসীমায় থাকা ব্যক্তিরা এসব আবর্জনা সমুদ্রে ছেড়ে দিতে পারে। আবার কক্সবাজারে অবস্থান করা আইএনজিও, এনজিওর অনেক কর্মকর্তা-কর্মজীবীকে দেখা যায় মদ সেবন করতে। কেউ কেউ বারে গিয়ে খেলেও লকডাউনের কারণে বারে যেতে পারেননি হয়তো। তারা নিজেদের মতো করে সংগ্রহ করে মদ খাওয়ার পর খালি বোতলগুলো জমিয়ে হয়তো নদীর মোহনায় ফেলেছেন। জোয়ারের পানিতে ভেসে সেগুলো দরিয়ানগর, কলাতলী ও হিমছড়ি সৈকতে এসে জড়ো হয়েছে। মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকায় একটি ইকো রিসোর্টে নানা ধরনের মদ পরিবেশন করা হয়। তাদের জন্য সমুদ্রটা-ই ডাস্টবিন। তারাও এসব বর্জ্য ফেলতে পারেন।

কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, এসব বর্জ্য দেখে আমরাও হতবাক। ভেসে আসা বর্জ্যে গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ও মদের বোতল। ব্যবহার অনুপযোগী গৃহস্থালি পণ্যগুলো হয়তো পুড়িয়ে ফেলে বা বিক্রি করে দেয় স্থানীয়রা। এভাবে তারা সৈকতে ফেলে না। আমরাও ধারণা করছি সৈকতে অবস্থান করা কোনো বড় জাহাজ এসব বর্জ্য ফেলেছে। এরপরও কোথা থেকে এলো এসব বর্জ্য তা বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে আমাদের টিম। রোববার সকাল থেকে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মীরা আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন।

সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, আমাদের ২০০ নটিক্যাল সমুদ্রসীমায় পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। বিদেশি জাহাজ থেকে আমাদের জলসীমায় বর্জ্য ফেলার অভিযোগ থাকলেও সরকার কখনও তাদের শনাক্ত বা শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি, যা সমুদ্র দূষণ ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) কনভেনশনের লঙ্ঘন। তাই আমাদের এখন সমুদ্র কমিশন গঠন করে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা উচিত।

12 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন