২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনা প্রাদুর্ভাবে কুয়াকাটায় নেই পর্যটকদের সেই আনাগোনা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ, ০৯ আগস্ট ২০২০

উত্তম কুমার হাওরাদার, কলাপাড়া:: করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটায় আগের মতো পর্যটক আসে না। তাই আমাগো গাড়িতে খ্যাপ নাই। তবুও খ্যাপের আশায় থাকি। এই বুঝি খ্যাপ আইছে। আইজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইশ টাহা হইছে। সারাদিনে যা কামাই করি তার অর্ধেকটা দিতে হয় মহাজনকে। বাকি টাকাটা থাকে মোর। সেই টাকা দেই সংসারে। তবে পর্যটক আসলে আয় ভাল হয় এমনটাই বলেছে সৈকতের ঘোড়া গাড়ি চালক মিজান হোসেন।

ঘোড়া চালকদের সূত্রে জানা যায়, তাদের মালিকের ৯টি ঘোড়া রয়েছে। এক একটি ঘোরার এক এক রকম নামও দেয়া হয়েছে। যেমন চাঁদনী, চুমকি, রিনা, পাগলা, লালচাঁন-১, লালচাঁন-২, বাদশা, আলিফ ও চাঁদ বহাদুর। করোনা সংক্রমন পরিস্থিতিতে প্রায় চার মাস কুয়াকাটা লকডাউন থাকায় ঘোড়া গুলোও সৈকতে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের আগ মূহুর্তে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও আসা অনুরুপ পর্যটক না থাকায় ঘোড়া চালকদের আয়ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আর সৈকতের ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি চালরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের বাড়ি কুয়াকাটা সৈকতের আশপাশে। কারো বাবা আছে, মা নেই। কারো মা আছে, বাবা নেই। আবার কারো মা-বাবা কেউই নেই। এরাই ঘোড়ার মালিকের কাছ থেকে ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি চুক্তিতে নিয়ে সৈকতে এ কাজ নিয়োজিত রয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা দেছে, আগত এসব পর্যটকরা সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে নেচে গেয়ে সমুদ্রে গোসল, হৈ হুল্লোড় আর সৈকতে খেলাধুলায় মেতেছেন। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য অবলোকন সহ সৈকতে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেক পর্যটক। কিন্তু সৈকতে ঘোড়া গাড়ি ও ঘোড়া গুলো পর্যটকবিহীন দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর চালকরা তার পাশে ঘোরাফেরা করছে।

ঘোড়া চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সৈকতে মোটারসাইকেল সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘোড়ায় চরা কিংবা ঘোড়ার গাড়ি কদর কমে গেছে। আর মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ও খুব সহজেই যাওয়া যায়। আর ঘোড়া কিংবা ঘোড়া গাড়িতে এখানে আসা পর্যটকরা সখের বসত চরে। করোনা পরিস্থিতির কারনে আগের মতো পর্যটক নাই। তাই আমাদের আয় কমে গেছে। এখন আমাদের দিন পার করেতে হচ্ছে খুব কষ্টে।

ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির মালিক মো. সেন্টু মিয়া বরিশালটাইমসকে জানান, ঘোড়ার খাবারের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। আগে ঘোড়ার খাবারের দাম খুব কম ছিল। এছাড়া কুয়াকাটা এখন আগের মত পর্যটক নেই। খ্যাপ কমে যাওয়ায় আয়ের চেয়ে ব্যায় বেড়েছে দ্বীগুন। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব বেশি দিন আর এ পেশায় থাকা যাবে না।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো.মাসুম বিল্লাহ বাঁধন বলেন, ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য বিনোদন। এই বাহনটি সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

কুয়াকাটা পৌর মেয়ার আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারা চাইলে পৌর সভার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি জহিরুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, এখানে যারা ঘোড়া চালক তারা অত্যন্ত গরীব ঘরের সন্তান। করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে প্রায় চার মাস কুয়াকাটা লকডাউন ছিল। পর্যটক না থাকায় ঘোড়া চালকরা বসে ছিলো। গত ১ জুলাই থেকে পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ছুটির দিন প্রতি শুক্রবারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ে। আর আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে এবং করোনা সংক্রমন রোধে ট্যুরিস্ট পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন