২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

‘ছেলের লাশটা যেন পাই’

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৫৪ অপরাহ্ণ, ৩০ মে ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: লিবিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে যশোরের এক যুবক রয়েছেন। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেনের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২০)। তার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
রাকিবের মা মাহেরুননেছার আর্তনাদে ভারী চারপাশ। সন্তানকে ফিরে পেতে মায়ের আহাজারি- ‘আমাগের আর ছাদের বাড়ি করা লাগবে না, তুই ফিরে আয় বাজান; ফিরে আয়! আমার সোনারে আমার কাছে আনি দেন।’
আহাজারির একপর্যায়ে মাহেরুননেছা বলেন, মুক্তিপণের দাবিতে রাকিবুলকে নির্যাতন করত। মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করাও হয়েছিল। কিন্তু ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলল। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। ছেলের লাশটা যেন পাই। গ্রামেই তার কবর দিতে চাই। আর কখনও তার জীবিতমুখ দেখতে পারব না।
ছেলেকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন ইসরাফিল হোসেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, জমি বিক্রি ও জমানো সাড়ে ৪ লাখ টাকায় দালালের মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠান। দালালচক্র লিবিয়ার একটি শহরে রাকিবকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে।
মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে রাজিও হন। এরই মধ্যে রাকিবুলকে গুলি করে হত্যা করেছে।
রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা বলেন, উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছিল রাকিবুল। ভালো কাজের জন্য দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে।
১৭ মে মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলাম আমরা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলাম না।
তার চাচাত ভাই সকালে লিবিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন, ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন।
রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন লিবিয়া প্রবাসী। তিনি এক বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান।
চার মাস আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে রাকিবুলকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরানোর ইচ্ছা নিয়ে রাকিবুল বিদেশে পাড়ি জমান।
তার চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেনের মাধ্যমে লিবিয়ার দালাল আব্দুল্লাহর মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌঁছায়। সেখানে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে জিম্মি হওয়ার পরে মানব পাচারকারীদদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে রাকিব নিহত হয়।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন