৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

পটুয়াখালীতে তরমুজ খাওয়ার অপরাধে ১১ শিশুকে নির্যাতন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৪৭ অপরাহ্ণ, ১০ এপ্রিল ২০১৮

খেত থেকে ১০টি তরমুজ তুলে খেয়ে ফেলে ১১ শিশু-কিশোর। এ ‘অপরাধে’ তাদের ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। ন্যাড়া করে দেওয়া হয় ৩ জনকে। লজ্জায় গত রোববার থেকে ১১ জনই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। গতকাল সোমবার তারা বিদ্যালয়েও যায়নি।

এ ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামে। নির্যাতিত শিশুদের ৩জন বিদ্যালয়ে যায় না। অন্যদের একজন ষষ্ঠ, দুজন অষ্টম, তিনজন নবম ও দুজন দশম শ্রেণির ছাত্র। ভরিপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রজ্জবিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তারা। সবার বয়স ১৪ বছরের কম।

জানতে চাইলে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল সকাল আটটার দিকে মারধরের শিকার দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ জন নারী বাড়ির সামনে একত্র হয়ে আলাপ করছেন। তাঁদের মধ্যে এক নারী কাঁদছেন। তিনি ওই শিক্ষার্থীর মা।

কেমন আছেন-জিজ্ঞেস করতেই ওই নারী হাউমাউ করে কাঁদেন। বলেন- ‘অরা না কইয়া তরমুজ খাইয়া ভুল করছে, হেইয়ার লইগ্যা অগোরে বোলাইয়া (ডেকে) নিয়া মারবে ও মাথা কামাইয়া দিবে? সরোমে (লজ্জায়) স্কুলে যাওন বন্ধ কইরা দিছে।’

ঘরে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। সে বলে, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তারা ১১ বন্ধু একই গ্রামের জামাল খানের খেত থেকে না বলে ১০টি তরমুজ ছিঁড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলে। এ কারণে শনিবার রাতে মকবুল সিকদারের বাড়ির ছাদে সালিসের কথা বলে তাদের ডেকে নেন ফরিদ উদ্দিন সিকদার। সেখানে তারা ১১ জন ও অভিভাবকেরা উপস্থিত হন। সালিসে শতাধিক মানুষ ছিল। রাত নয়টার দিকে সালিস শুরুর আগে খেতের মালিকের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সাইফুল সিকদার তাদের চারজনের মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ সময় মো. জুলহাস ও তাঁর বাবা ছিদ্দিক সরদারের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন তাদের ১১ জনকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও পিটিয়ে আহত করে। এতে তাদের অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। বাড়ি যাওয়ার পথে দ্বিতীয় দফায় তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয় এবং তাদের বাড়ি এসে হুমকি দেওয়া হয়।

ওই সালিস বৈঠকের আয়োজক ফরিদ উদ্দিন সিকদার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমার উদ্দেশ ছিল শিশুদের বুঝিয়ে বলা, একটু শাসিয়ে দেওয়া। যাতে এ-জাতীয় কাজ ভবিষ্যতে তারা আর না করে। কিন্তু হঠাৎ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে উদ্দেশ পণ্ড হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, সাইফুল কয়েক ছাত্রের চুল কেটে দিয়েছে। তিনি বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেবেন।

এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেও সাইফুল সিকদারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চুল কেটে দেওয়া এক শিক্ষার্থীর মা বলেন- ‘খালি মারলে আমার কোনো আপত্তি আছিলে না। মাথার চুল কামাইছে, হেইয়াতে দাবি আছে। আমার পোলাডায় এহন লজ্জায় ঘরেগোনে নামে না, স্কুলেও যাইতে চায় না।’

নির্যাতিত নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এখন ক্যামনে সবার সামনে যামু? এ কারণে নিজেকে লুকিয়ে রাখছি।’ এরপর হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সে।
জানতে চাইলে ছিদ্দিক সরদার বলেন, ‘মারধর করিনি। কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছি।’

রজ্জবিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, বিষয়টি আপত্তিকর ও খুব দুঃখজনক। অপরাধ করলে বিচার হবে। কিন্তু মাথা ন্যাড়া করে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে শিগগিরই মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

9 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন