২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াত?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

বিশেষ বার্তা পরিবেশক:: সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। পেঁয়াজের দাম কোথাও কোথাও তিনশ টাকা ছুঁয়েছে, যা একটা বিশ্বরেকর্ড। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে আজ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় পেঁয়াজের মূল্য সংকটের পেছনে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, এরকম অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, পেঁয়াজের লাগামহীন উর্ধ্বগতির পেছনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যেমন সীমাহীন ব্যর্থতা রয়েছে, তেমনি একটি বিশেষ মহল সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। দেখা গেছে যে, বিএনপি-জামাতের চিহ্নিত কিছু ব্যবসায়ী যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন, মজুদ রাখেন কিংবা সারা দেশে পেঁয়াজ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত, সেই গ্রুপটিই পেঁয়াজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মোট ১২ জন ব্যবসায়ী বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই ১২ ব্যবসায়ীর ৯ জনই বিএনপি এবং জামাতের সমর্থক। পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো কখনই জড়িত ছিল না। সাধারণত মধ্যস্তরের কৃষি এবং আধাকৃষি বাণিজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনমাস আগে পেঁয়াজের সংকট শুরু হওয়ার একমাস পরে সরকারের উদ্যোগে বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে পেঁয়াজ আমদানি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদের মধ্যে এস. আলম গ্রুপ অন্যতম। তাদের আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ঢাকায় আসার পথে। তারা মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। সরকারের নির্দেশে আরও কয়েকটি বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখন পেঁয়াজ আমদানির দিকে মনোনিবেশ করেছে।

কৃষি-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশ থেকে যে পেঁয়াজগুলো আনা হচ্ছে সেগুলো আসতে আসতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। সেই সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ানোর চক্রান্ত হচ্ছে। এদের লক্ষ্য হলো তিনটি-

প্রথমত; পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনমনে একটা অস্থিরতা তৈরি করা। সরকারের প্রতি জনগনের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করা।

দ্বিতীয়ত; পেঁয়াজ হলো এমন একটি পণ্য যেটির দাম যদি বাড়ে তাহলে এর সূত্র ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যেমন, পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে এখন চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে।

অর্থনীতিতে ‘চেইন অব প্রোডাক্ট’ বলে একটি কথা আছে। যে পণ্যগুলোর দাম বাড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ে পেঁয়াজ হলো সেরকম একটি পণ্য। কাজেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে পুরো বাজার ব্যবস্থায় বিশৃংখলা এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি করার জন্য একটি মহল এই চক্রান্ত করছে।

তৃতীয়ত, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার ফলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসছে। এখন মিয়ানমার মিশরসহ আরও কয়েকটি দেশের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসছে। অথচ মাত্র ২০-৪৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। বিদেশে থেকে যখন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে তখন দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজে ন্যায্য মূল্য পাবে না চাষীরা। ফলে কৃষকদের ওপর আরেকটি আঘাত আসবে। যারা কষ্ট করে পেঁয়াজের উৎপাদন করেছে তারাই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। সেটার ক্ষোভও সরকারের উপর পড়বে।

অথাৎ এই ত্রিমুখী চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্যই কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের মূল্য সংকট তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত সংকট বলে জানা গেছে।

একোধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, কিছু কিছু গুদামে পেঁয়াজ পঁচিয়ে ফেলা হচ্ছে। অথাৎ শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনই এই পেঁয়াজ সংকটের একমাত্র কারণ নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মনে করছে। কারণ যদি মুনাফা অর্জনই সংকটের মূল কারণ হতো তাহলে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ পঁচতে দিত না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে যে চট্টগ্রামে একাধিক গুদামে পেঁয়াজে পঁচন ধরেছে। তারপরও সেই পঁচা পেঁয়াজগুলো বাজারে দেওয়া হচ্ছে বা ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

একাধিক সূত্র বলছে, যদি শুধুমাত্র মানুাফা অর্জনের জন্য পেঁয়াজ গুদামে রাখা হতো, তাহলে সেগুলো পঁচার আগেই বাজারে দেওয়া হতো এবং বেশি মূল্যে বিক্রি করা হতো। কিন্তু এখন যে টন-কে টন পেঁয়াজ পঁচিয়ে ফেলা হচ্ছে সেটার পিছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা দৃশ্যমান। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের ব্যর্থতাও অস্বীকার করা যায় না। যখন থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হয়ে ১০০ টাকায় পৌঁছে যায়, তখনও বাণিজ্য মন্ত্রণায়লয় এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এটার পিছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে, যারা ষড়যন্ত্র করছে এবং যারা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। যে কারণে যারা এই সিন্ডিকেট করেছে সেই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবাধে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। শুরুতেই যদি এখানে গোয়েন্দা এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে এই অশুভ চক্রান্ত হতো না বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন। এখন পেঁয়াজ রাজনীতি শেষ পর্যন্ত সরকার কীভাবে সামাল দেয় সেটাই দেখার বিষয়।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন