২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির পরীক্ষা নিতে ফেরেশতা পাঠালেন আল্লাহ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৫১ অপরাহ্ণ, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন::: আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। কাউকে পরীক্ষা করেন রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ দিয়ে, আবার কাউকে করেন সম্পদ-প্রাচুর্য দিয়ে। তবে সর্বাবস্থায় একজন মুমিনের কর্তব্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টিদায়ক কাজে অবিচল থাকা। সুখ-দুঃখ যেকোনো পরিস্থিতি হোক, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা চাই। সুসময় হলে তা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা করবে। আর কঠিন সময়ের সম্মুখীন হলে তা থেকে পরিত্রাণের দোয়া করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠিন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

প্রিয়নবী (সা.) মুমিনকে প্রাচুর্য ও বিপদের সময় কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটা বিস্ময়কর। তার সব কাজে কল্যাণ নিহিত। মুমিন ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এমন নয়। মুমিন আনন্দের মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এতে তার কল্যাণ হয়। আবার বিপদের মুহূর্তে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার কল্যাণ বয়ে আনে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, বনি ইসরাঈলের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল কুষ্ঠরোগী, অপরজনের টাকমাথা এবং অন্যজন অন্ধ। মহান আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাদের কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে ফেরেশতা বলল, তোমার সবচেয়ে পছন্দের বস্তু কী? সে বলল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া এবং যে রোগের কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে তা থেকে মুক্তি লাভ করা। ফেরেশতা তার দেহ মুছে দিল। এতে তার গায়ের রোগ দূর হয়। তাকে সুন্দর রূপও দেওয়া হলো। অতঃপর ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোন সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, উট অথবা গরু (বর্ণনাকারীর সন্দেহ আছে)। তাকে ১০ মাসের গর্ভবতী একটি উটনি দেওয়া হয়। ফেরেশতা বলল, আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত দিন।

অতঃপর ফেরেশতা টেকো মাথার লোকের কাছে এলো। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী? সে বলল, সুন্দর রং এবং টাক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেশতা তার মাথা মুছে দিল। তার টাক ভালো হয়ে গেল। তার মাথায় সুন্দর চুল গজাল। ফেরেশতা প্রশ্ন করল, কোন সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, গরু। তাকে একটি গর্ভবতী গাভি দেওয়া হলো। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত দান করুন।

অতঃপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে এলো। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী? সে বলল, আল্লাহ যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন, যেন আমি মানুষকে দেখতে পারি। ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করল। তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোন ধরনের সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, ছাগল। তাকে বেশি বাচ্চা দেয় এমন ছাগি দেওয়া হলো।

অল্প দিনের ভেতর উট, গাভি ও ছাগলের বাচ্চা হলো। প্রত্যেকের একেকটি প্রান্তর ভরে গেল উট, গরু ও ছাগল দিয়ে। অতঃপর আগের ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে প্রথম বেশ ধারণ করে এসে বলল, আমি একজন অসহায় ব্যক্তি। এবারের ভ্রমণে আমার সব কিছু ফুরিয়ে গেছে। এখন আল্লাহ ও তোমার সহায়তা ছাড়া এমন কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারব। মহান আল্লাহর নামে তোমার কাছে আমি একটা উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং, সুন্দর অবয়ব ও অঢেল সম্পদ দিয়েছেন। তা দিয়ে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারব। এ কথা শুনে কুষ্ঠরোগী বলল, আমার অনেক ঋণ হয়েছে। ফেরেশতা বলল, তোমাকে তো আমি চিনি। তুমি কুষ্ঠরোগী ছিলে, মানুষ তোমাকে ঘৃণা করত, তাই না? তুমি তো নিঃস্ব ছিলে, আল্লাহ তোমাকে প্রাচুর্য দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলল, এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ যেন তোমাকে আগের মতো করে দেন। অতঃপর ফেরেশতা টাক মাথার ব্যক্তির কাছেও আগের বেশ ধারণ করে এলো। ফেরেশতা তার কাছেও প্রথম ব্যক্তির মতো সাহায্যের আবেদন করল। সে-ও আগের ব্যক্তির মতো উত্তর দেয়। তাই ফেরেশতা তাকে বলল, তুমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ যেন তোমাকে আবার আগের মতো করে দেন।

অতঃপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে আগের বেশে এসে বলল, আমি একজন অসহায় পথিক। আমার সফরের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছতে আল্লাহ ও তোমার সহায়তা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। লোকটি বলল, হ্যাঁ, আমি তো অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কাজেই তোমার ইচ্ছামতো তুমি নিয়ে যাও। আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর শপথ! আজ তুমি যা নেবে তাতে তোমাকে কোনো বাধা দেব না। ফেরেশতা বলল, তোমার সম্পদ তোমার কাছে থাক। তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন এবং তোমার অপর দুজন সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৪, মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৪)

অতএব, একজন মুমিনের প্রাচুর্যের সময় সাধ্যমতো অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। কারণ অর্থ-বিত্ত সবই মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। আমাকে তা দিয়েছেন সঠিক ব্যবহারের জন্য। কাজেই সহায়-সম্পদ ও অর্থবিত্তের অন্যায় ব্যবহার হলে আল্লাহ তা ছিনিয়ে নেবেন।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন