২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বরিশালে গৃহকর্মীকে অমানসিক নির্যাতন, পালিয়েছে স্বামী-স্ত্রী

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, ১২ আগস্ট ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশাল শহরের দক্ষিণ আলেকান্দা রিফিউজি কলোনী এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় খুন্তির ছ্যাঁকা ও লোহার রড দিয়ে আশা (১৩) নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে অভিযুক্ত বুলবুল বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বকুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। পাশাপাশি শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসার শেষে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠায়। নির্যাতনের শিকার আশা শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপ্টিস্ট মিশন সড়কের ডেভিড বিশ্বাসের মেয়ে।

আশার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রায় দুই বছর আগে তাকে রিফিউজি কলোনী সড়কের বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাসের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেন পরিবার। প্রথম প্রথম তারা ভালো ব্যবহার করলেও কয়েক দিন পর তার ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন চালাতে শুরু করেন বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাস। সব সময় বাসায় আটকে রাখাসহ কাজে একটু ভুল হলেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা এবং পাশাপাশি লোহার রড দিয়ে মারধর করা হতো। এবং ক্ষুধার কথা বললে পঁচা ও বাসি খাবার দেওয়া হতো।

পুলিশ আরও জানায়, আশা মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাতে কৌশলে দরজা খুলে পালিয়ে পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নেয়। আশপাশের লোকজন থানায় খবর দেন। পরে পুলিশের একটি টিম গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

নির্যাতনের শিকার আশার বাবা ডেভিড বিশ্বাস বরিশালটাইমসকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে বুলবুল বিশ্বাসের বাসায় মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে দিয়েছিলেন। তখন বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাস বলেছিলেন নিজ সন্তানের মতো আশাকে দেখে রাখবেন এবং ভালো খাবার দেবেন। পরে মারধরের কথা শুনে একাধিকবার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বুলবুল বিশ্বাসের পরিবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়নি। উল্টো মেয়ে ও আমার বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেয়ার হুমকি দেয়। ফলে অসহায়ের মতো ফিরে আসতাম।

পরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা ও নির্যাতনের পর হত্যার হুমকি দিয়ে তার মেয়েকে বাসায় আটকে রাখা হয়। এমনকি চিকিৎসাও করায়নি। কোনো ওষুধও খেতে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মেয়ে বুলবুল বিশ্বাসের বাসা থেকে পালিয়ে আসে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বরিশালটাইমসকে জানান, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করতে গেলে অভিযুক্ত বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাসকে বাসায় পাওয়া যায়নি। তারা পুলিশের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আগেই বাসা থেকে পালিয়ে যান। এ সময় বকুল বিশ্বাসের পরিবারের এক সদস্য সায়মন কুন্ডল বিশ্বাস নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, কাজে সামান্য ভুল বা দেরি করলে আশার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়াসহ লোহার রড দিয়ে পেটানো হতো। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাস দম্পতির নির্যাতনে গালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে শিশুটির। পালাতে যেন না পারে সেজন্য শিশুটিকে আটকে রাখা হতো বাসায়। আশার বাবা ভয়ে মামলা করতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।

কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন বাদী হয়ে অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।’

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন