২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ভাঙন রোধে চলছে কাজ মেঘনা পাড়ের মানুষের মাঝে আনন্দের জোয়ার

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:২১ অপরাহ্ণ, ০৪ জুন ২০২৩

ভাঙন রোধে চলছে কাজ মেঘনা পাড়ের মানুষের মাঝে আনন্দের জোয়ার

হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) : ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিনের নদী ভাঙন রোধে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় আনন্দের জোয়ার বইছে দুই উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের মধ্যে।

প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরেই স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তাদের আর ভাঙনের কবলে পরে ভূমি ও গৃহহীন হতে হবে না। এসব মানুষের দীর্ঘদিনের আতঙ্ক দূর করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষজন। তবে গুণগত মান ঠিক রেখে দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শেষ করার দাবি স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ পূর্ণবাসন, নি:স্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ শীর্ষক এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে; ৩৪ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ, ১৭ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ, ১৯ কিলোমিটার বেতুয়া নদী খনন, ৭টি সুইস গেট, ৩টি ওয়াচ টাওয়ার ও ৩৪৪টি সোলার লাইটিংসহ আরো কয়েকটি আইটেম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

কাজটি শেষ হলে লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষ নদী ভাঙনের হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাবেন। কাজ চলমান অবস্থায় এর গুণগত মান ঠিক রাখতে আমরা সঠিকভাবে মনিটরিং করবো।

তজুমদ্দিনের সোনাপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজার গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মিয়া, মাহমুদা বেগম ও মো. সালাউদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৭ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই নদী ভাঙে আবার ধার-দেনা করে নতুন জমি কিনে বসতঘর নির্মাণ করেন। নদী ভাঙনের ফলে তারা জমি-জমা সব হারিয়ে বর্তমানে আনন্দ বাজার নামক এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে জমি ক্রয় করে বসবাস করছেন।

আর বার বার নদী ভাঙনের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারা। তারা আরো বলেন, সরকার নদী ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ করে টেকসইভাবে বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করেছেন।

কাজ শেষ হলে আমাদের আর বসতঘর ও জমি নদী ভাঙনের শিকার হবে না। ভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে সরকারের এমন পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

লালমোহনের লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া জানান, এ ইউনিয়নটি মেঘনা তীরবর্তী। বিগত কোনো সরকার ভাঙন রোধে কাজ করেনি। সে সময় এই এলাকার মানুষ ভাঙনের পর ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন।

তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ইউনিয়নের দুই কিলোমিটারেরও অধিক স্থানে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনাসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এখনো যেটুকু বাকি আছে তাও আর থাকবে না।

কারণ ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ বছর পর মানুষ এখন শান্তিতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, দুই উপজেলার মানুষকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে একের পর এক প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এতে করে নদী ভাঙন অনেকটা কমেছে। সবশেষ এই দুই উপজেলার বাসিন্দাদের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।ওই প্রকল্পের কাজও এখন শুরু হয়েছে।

এটির কাজ শেষে হলে লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষ স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবেন। এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, বিএনপি জোট সরকারের আমলে দুই উপজেলার নদী ভাঙন বন্ধের জন্য কোনো কাজ হয়নি। যদি হতো তাহলে অনেক মানুষ নিঃস্ব হওয়া থেকে রক্ষা পেতো।

বিএনপি জোট সরকারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনী এলাকার কোনো উন্নয়ন করেনি, শুধু তাদের পকেটের উন্নয়ন করেছেন। প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে দুপুরে ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ পূর্ণবাসন, নি:স্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন