২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ভারতে সেই মসজিদে তবলিগে অংশ নেয়া ২৪ বাংলাদেশি কোয়ারেন্টিনে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৪ অপরাহ্ণ, ০৩ এপ্রিল ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় আলামি মার্কাজ মসজিদে তাবলিঘি জামাতে অংশ নেওয়া একাধিক বিদেশিকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার। যার মধ্যে এক মালয়েশিয়ার নাগরিক মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

ভারতের দুই রাজ্য সবমিলিয়ে বর্তমানে ২৪ বাংলাদেশি কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জনকে মহারাষ্ট্রে এবং বাকি ১১ জনকে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

করোনা সন্দেহে মহারাষ্ট্রের থানে পুলিশ ১৩ জন বাংলাদেশি এবং ৮ জন মালায়েশিয়ার নাগরিককে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে।

থানে পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, ওই ২১ জন বিদেশি থানে জেলার মুম্বার কৌসা এলাকার তানভির আল উলম মসজিদে আত্মগোপন করেছিলেন।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়ার পর নবি মুম্বইয়ের তাবলিগ জামাতে অংশ নেয় সকলে এবং মুম্বাই এলাকার ওই মসজিদের একটি ঘরে গাদাগাদি করে অবস্থান করছিলেন তারা।

থানে পুলিশের জোন ১ ডিসিপি এস এস বার্সে জানান, আমাদের কাছে খবর ছিলো যে কিছু বিদেশি নাগরিক মুম্বাই এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এরপর অভিযান চালিয়ে জানতে পারি, গত ১৫ দিন ধরে কৌসার মসজিদে ওই বিদেশিরা ছিলেন। আমরা প্রথমে ১৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকের খোঁজ পাই। পরে ৮ জন মালেশিয়ান নাগরিককেও পাওয়া যায় ওই মসজিদ থেকে।

তিনি জানান, তাদের সাথে থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চিকিৎসকেরাও ছিলেন। তারা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে তাদের সকলকেই কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করতে ওই বিদেশিদের লালারস ও অন্যান্য নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যেও ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বদোহী জেলার হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।

বদোহীর একটি গেষ্ট হাউজে ওই বাংলাদেশিদের রাখা হয়েছিলো। কিন্ত বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর কারনে কামালুদ্দিন আনসারি নামে তাবলিগ জামাত মার্কাজ কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, ওই ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক তাবলিঘি জামাতে অংশ নেওয়ার পর গত ৪ মার্চ বদোহীতে আসেন। সেক্ষেত্রে তারা প্রত্যেকেই ভিসার নিয়ম লঙ্ঘণ করেছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গত ১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত দিল্লির নিজামুদ্দিনে চলা ওই তাবলিগ জামাতে যোগ দিতে এসেছিলেন দেশ বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ। এরপর ১৫ মার্চ অনুষ্ঠান শেষের পরেও নিজামুদ্দিন এলেকাতেই থেকে যান অনেকেই। গত ২৩ মার্চ ভারত জুড়ে জনতা কার্ফুর আগের দিনেই ওই মসজিদে ছিলেন প্রায় ১৭৪৬ জন মানুষ। যাদের মধ্যে আবার ২০০ জনের মতো ছিলেন বিদেশি নাগরিক।

ভারতের পররাষ্টমন্ত্রণালয় সুত্রে খবর, কেবলমাত্র নিজামুদ্দিনেই নয়, গত ১ জানুয়ারি প্রায় ২ হাজার বিদেশি ভারতে এসেছিলেন। যারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাবলিগ জামাতের কাজকর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন।

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওই জামাতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নমুনা মিলেছে। ইতিমধ্যে, ৭ জনের মৃত্যুও হয়েছে।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এক সপ্তাহ আগেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানায়, তাবলিগ জামাতে সামিল হওয়া সমস্ত মানুষদের চিহ্নিত করে তাদের পুরো শরীর স্ক্রিনিং করাতে হবে। ওই ব্যক্তিরা অন্য কারো সংস্পর্শে এসেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়। যদিও সেই সময় ভারতের অধিকাংশ রাজ্যই এই বিষয়ে তেমন সক্রিয়তা দেখায়নি। পরে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই বিভিন্ন রাজ্যে জোরদার অভিযান শুরু হয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমান, ওই জামাতে অংশ নিতে আসা বিদেশিরাও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৭০ টি দেশের আণুমানিক ২ হাজার বিদেশি নাগরিক ট্যুরিষ্ট ভিসা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাবলিগ জামাতের কাজে যুক্ত রয়েছেন।

এর মধ্যে সব থেকে বেশি রয়েছেন বাংলাদেশের ৪৯৩ জন, ইন্দোনেশিয়ার ৪৭২ জন, মালয়েশিয়ার ১৫০ জন এবং থাইল্যান্ডের ১৪২ জন। এদের প্রত্যেকের ভিসার মেয়াদ ৬ মাস।

সেক্ষেত্রে কোনও বিদেশির শরীরে করোনার উপসর্গ আছে কি না তা জানতে স্ক্রিনিং করানো হবে। প্রয়োজনে তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে। যদি দেখা যায় কারো শরীরে এই ভাইরাসের নমুনা নেই, সেইক্ষেত্রে ওই ব্যাক্তিকে বিমান চালু হলে প্রথম ফ্লাইটেই তার নিজের দেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হবে।

4 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন