২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

মেয়র সাদিক বিতর্কিত কেন? সহোচররাই দিচ্ছে আত্মঘাতী স্বীকারোক্তি!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:০৫ অপরাহ্ণ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ রাজনীতির পিচ্ছিল পথ চলায় বর্তমান সময়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নগর উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পথে পথে বাঁধা, সেই সাথে ঘরোয়া প্রতিপক্ষরা মাঠে নিরব থাকলেও জায়গামতো সরব থেকে তার নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে বিতর্কের ঘোরপ্যাচে ফেলে দিয়েছে বা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় সিটি মেয়রের মানসিকতা এবং কখন কোনো সিদ্ধান্ত এবং গন্তব্যের ঠিকানা কোথায় তা আর গোপন থাকছে না। চারপাশে থাকা বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহোচররাই তার কালীবাড়ি সড়কের বাড়ি থেকে বের হয়ে নেতার বিরুদ্ধে আচরণগত অসন্তোস এবং অনেক গোপন তথ্যাদি প্রকাশ করায় তা গুরগুর করে যেমন মিডিয়ার দুয়ারে পৌছাচ্ছে। সুযোগ বুঝে তা লুফে নিয়ে দলীয় প্রতিপক্ষরা জানান দিতে কৌশলী ভূমিকা রাখায় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে সমসাময়িককালে নানা বিতর্ক আর গুঞ্জন জোরালো রূপ পাচ্ছে।

সেই সাথে এই প্রথম তার নেতৃত্বের দূরদর্শিতার প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি অনুগতদের অপকর্মের দায়ভার কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে তার ক্ষমতা টালমাটাল করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। বরাবরই রহস্যময় আচরণের অধিকারী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও কোনো বিষয়ে মুখ খুলছে না। হতে পারে এটা তার রাজনৈতিক কৌশল। তার ঘরোনার সুশীল অংশ এই তথ্য দিয়ে বলছে, সাদিক আব্দুল্লাহ দলীয় নেতা থেকে সিটি মেয়র হওয়ার পরই তার অনুসারীদের মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশার সাথে ফাড়াক খুঁজে পাওয়ায় নিজ ঘরেই অসন্তোসের বীজ বপন করেছে একটি অংশ। সেখানে নেতার কাছে কে বেশী বিশ্বস্ত বা সান্নিধ্য পাওয়ার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি প্রাপ্তি নিয়ে লড়াইয়ে নিরবে নিজ শিবিরেই দেখা দিয়েছে দ্বিধা-বিভক্ত। দলীয়

সূত্রগুলোর দাবি, ইতিমধ্যে অনেক নেতা-কর্মী এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে বিশ্বস্ত সহোচররা নিস্ক্রিয় হয়ে তার কালীবাড়িমুখী বাসভবনে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে কালীবাড়ি সড়কের অনেক গোপনাদী প্রকাশ্যে চলে আসছে।

এই সংক্ষুব্ধ নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে বেশ কয়েকজন নগর আ’লীগের নেতা ঘিরে রাখায় বাহিরের প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতিগত তথ্যাদী তার কানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিভক্তি এবং আনুগত্য দেখানো এসকল নেতারা নিজ শিবিরের প্রতিপক্ষ ভাবাপন্নদের দমন ও নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার চেষ্টায় শীর্ষ এই নেতাকে ভুলভাল বোঝানোয় সফল হওয়ায় শুধু সংগঠন নয়, সিটি কর্পোরেশনের অনেকের ভাগ্যের শিঁকে ছিঁড়ে পড়েছে। আবার লাভ-ক্ষতির প্রলোভনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপপ্রয়োগে উৎসাহিত করায় তার দায়ভার আপনাআপনি চাপছে মেয়র সাদিকের ঘাড়ে। নতুল্লবাদ বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্ন্তদ্বন্দ্ব, সর্বোপরি বিসিকের উন্নয়ন কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপের চেষ্টা সাদিক আব্দুুল্লাহ’র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বড় ভুল বলে মনে করছে দলের সুশীল ওই অংশটি।

তাদের অভিমত, নগরীর বাজারসমূহ ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বিপুল অবৈধ অর্থের উৎসের বড় যোগান সেখান থেকে আসছে বলে নিজ ঘর থেকেই প্রচার করছে সংক্ষুব্ধরা।
এই দুই সেক্টর নিয়ন্ত্রণে দুই নেতাকে প্রাধান্য দেওয়ার মধ্যে মহানগরের জনৈক এক নেতাকে বেশী মাত্রায় ক্ষমতা ও দেখভাল করার দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার দেওয়াসহ ছাত্রলীগের আরেক নেতার ক্যাডারভিক্তিক রাজনীতি অনেকেই ভালো চোখে নিচ্ছে না। এমনকি নিজ ঘরের নেতারাও। এই দুই নেতাকে নিয়ে মহানগর আ’লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যেই অর্ন্তদ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে দল ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। কিন্তু অস্তিত্ব এবং শাস্তির খড়গ নেমে আসতে পারে, এমন শংকায় কেউ প্রতিবাদ না করলেও তাদের ভূমিকা বিতর্কিত বলে আখ্যায়িত করে বাহিরে প্রকাশে বিরত থাকছে না। এমনকি সাদিক বিরোধী প্রতিপক্ষ শিবিরেও নানা খবর পৌছে দিচ্ছে সুকৌশলে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঘরোয়া লড়াই সেখান থেকেই সূত্রপাত। এদিকে সিটি কর্পোরেশনে কর্মকর্তাদের মধ্যে চেয়ার দখলের লড়াইয়ে কাউকে চাকরিচ্যুতির ফাঁদে ফেলাসহ চেয়ার অদলবদলে মেয়রের কানভারী করে সফল হওয়ায় এই দপ্তর থেকেই অনেক খবরাখবর বিতর্কে রূপ দিয়ে এবং কখনও গুজব আকারে কিছু খবর প্রচার পাচ্ছে মেয়র অনুগতদের আত্মঘাতী লড়াইয়ে।

অপর একটি সূত্রের দাবি, সুবিধাবাদীরা এসব কর্মকান্ডের দায়ভার ঈর্ষার কারণ হয়ে দাড়ানো ব্যবসায়ী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ওই নেতার সিদ্ধান্তের ফসল বলে তার বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র একটি জোট তৈরী হয়েছে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর।

তাদের ক্ষোভ, ওই নেতার কারণেই মেয়র সাদিক ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরে ‘কাঠের পুতুল’ বানিয়ে রেখেছে বলে মনে করছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ অপপ্রচারেও পিছিয়ে নেই। এই নেতাকে মেয়রের কাছ থেকে দূরে রাখাতে কৌশলে নানা প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রে ওই নেতার সর্বক্ষেত্রে সফলতা এবং দক্ষতা মূল্যায়নে মেয়র তার আস্থার জায়গায় অনঢ় থাকায় এই মিশন সফল হচ্ছেনা বলে অভিমত পাওয়া গেছে। তবে বেশি জটিলতা দেখা দিয়েছে ওয়ার্ড ভিক্তিক রাজনীতিতে। যাদেরকে ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তাদের মধ্যেও নেতৃত্বের বিস্তার নিয়ে লড়াই দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশ্যায় এই লড়াইকে আরও বেগবান করেছে। তাছাড়া ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ বর্তমান কাউন্সিলরদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা অপবাদ স্বপ্রণোদিত হয়ে নেতার কানে তুলে ধরায় তাদের সাথে মেয়রের দূরত্ব সহসাই তৈরী হয়েছে। ফলে ক্ষোভ থেকে কাউন্সিলরদের মধ্যেই মেয়রের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী হওয়ায় নগর উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতার একটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ঘরের মধ্যে অর্šÍঘাতের এই সুযোগে মিডিয়ার কতিপয় কর্মীও যুক্ত হয়েছে মেয়রকে তোষমোদী করে কাছাকাছি থেকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে প্রলুদ্ধ করতে। এক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ উদ্ধার হলেও মেয়রের উন্নয়ন উদ্যোগের অন্তরায় কোথায় এবং নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বা ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারছে না। অথবা প্রতিপক্ষ নেতা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তার বিরাগভাজনও হতে চাচ্ছেনা। রাখছে কৌশলী ভূমিকা। বরং এরা মিডিয়ার সাথে মেয়রের সম্পর্ক সময়বিশেষ সাংঘর্ষিক করে তুলছে। দলের তার অনুসারীদের মধ্যেকার পোড় খাওয়া নেতাদের মধ্যেও অসন্তোসের খবর পাওয়া গেছে। এই অংশটির দাবি হচ্ছে, সাদিক আব্দুল্লাহর যেভাবে রাজনৈতিক উত্থ্যান ঘটেছিলো তাতে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে নগরবাসীর হৃদয়েজুড়ে থাকা প্রয়াত নেতা শওকত হোসেন হিরনের জনপ্রিয়তার উচ্চতার জায়গা স্পর্শ করা কঠিনতর ছিলোনা।

বরং তোষামোদকারী নেতাদের কারনে মেয়র রাজনীতির প্রকৃত গতিপথ হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে, বরিশাল শিল্প নগরী নিয়ে মেয়রের সাথে ফরচুন সু কোম্পানীর দ্বন্দ্ব তাকে বেশিমাত্রায় বিতর্কিত করে তুলেছে। এমন উক্তি করে সুশীল অংশটি বলছে, চলমান এই লড়াইয়ে একজন তরুণের ক্যাডারভিক্তিক রাজনীতির দায়ভার এখন মেয়রকেই বহন করতে হচ্ছে। পারছে না কৌশলগত দিক গোপন রাখতে। একটি উদাহরণই তো যথেষ্ট। যেমন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরচুনে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বহনকারী একটি গাড়ি বাবুগঞ্জমুখী যাওয়ার পথে লাকুটিয়া সড়কে পৌছামাত্র স্থানীয় ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী গাড়ির গতিরোধ করে ভেতর থেকে অলৌকিকভাবে ইয়াবা উদ্ধারের অতি উৎসাহী ভূমিকা রাখা এবং স্থানীয় একজন ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা যেভাবে ঘটনার খন্ডচিত্র তার ফেসবুক থেকে লাইভ আকারে মেয়র সাদিককে দেখানোর অঙ্গভঙ্গি স্পষ্ট করে দেয় সাজানো নাটকের নেপথ্যের পরিকল্পনা।

এরকম নানা ইস্যুতেই নিজ দলীয় প্রতিপক্ষ গ্রুপ মেয়রকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশালের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে হাই কমান্ডের টেবিলে মেয়র প্রসঙ্গ তুলে নেতিবাচক নানা বিষয় উপস্থাপন করে তাকে বিতর্কিত করতে আপাতত অনেকটাই সফল বলে শোনা যাচ্ছে।

ঢাকার একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান বরিশাল প্রেক্ষাপটের আলোকেই দলের একটি অংশ হাইকমান্ডের কাছে সুপারিশ রেখে নগর নেতৃত্বের পরিবর্তনের বারবার তাগিদ দিয়ে সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিদ্ধান্ত নিতে কৌশল নিয়েছে। প্রকারান্তরে নেত্রীও বরিশাল প্রসঙ্গে নানা আঙ্গিকে খোঁজখবর রাখাসহ ধীরালয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে অগ্রসর হচ্ছেন বিকল্প নেতার সন্ধানে। অবশ্য এতথ্য কতটুকু সত্য, তা যাচাই করা না গেলেও নানা দিক থেকে এধরনের অভিন্ন খবর মিলছে।’

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন