২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

লক্ষণ শুভ নয়, বরিশালে নাশকতার আশঙ্কা ?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪৪ অপরাহ্ণ, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

শাকিব বিপ্লব, বরিশাল >> বিভাগীয় শহর বরিশালে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের নাশকতারসমূহ আশঙ্কা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র তাদের উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধ নয়, জঙ্গিবাদ সত্ত্বাও নয়, তবে রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকা একটি দুর্বৃত্তায়ন চক্র প্রতিহিংসামূলক একটি মহলকে দমন করতে এই নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে ওই সূত্রগুলোর ধারণা। এক্ষেত্রে বিশেষ একটি এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান বা জনমানবের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোই হচ্ছে মূল টার্গেট। ইত্যমধ্যে
এই মিশন বাস্তবায়নে শহরের একটি বাসভবনে পরিকল্পনার ছক অনুসারে বেশকিছু রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করে বিষ্ফোরক জাতীয় ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরী করা হয়েছে। ছাত্রত্ব নেই, নেই কেনো রাজনৈতিক পদ-পদবী তদুপরি মহানগরজুড়ে ছাত্রনেতা হিসেবে বর্তমান সময়ে শোরগোল ফেলা এক যুবক এই মিশনের ছক এঁকে নিজেই নেতৃত্বে দিচ্ছেন, এমনটি ধারণা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তথ্যদাতা সূত্রগুলো সময়কালসহ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না শহরের কোন বাসভবনে এই নাশকতা পরিকল্পনার বৈঠকে কারা অংশ নিয়েছিলো। অথবা কোথা থেকে কে এই বিস্ফোরক দ্রব্য আমদানি করা হয়েছে। শুধু ধারণা দিয়েছে, এই নাশকতার স্থান হতে পারে বরিশাল শিল্পনগরী বিসিক এলাকা।

আরও পড়ুন…

# ফরচুনের বুকে ফের ক্ষত, এবার পুলিশ কোন পথে হাঁটবে?

 

ওই সূত্রগুলোর এই তথ্যের সাথে একমত পোষণ করে বিসিকের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও একই সন্দেহের কথা জানিয়েছেন। আত্মরক্ষার প্রস্তুতিতে তারাও সতর্ক এবং তাদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আশেপাশে নিজস্ব লোকবল দ্বারা সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। নাশকতার এই খবর গত দুদিন ধরে এককান থেকে আরেক কানে পৌঁছে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মহল বিশেষে কম-বেশি আলোচনা আঁচ করা গেছে। এখবর গুজব না সত্য, তা অনুসন্ধানে বিভিন্নভাবে তথ্য তালাশে এখনও অকট্য কোনো সত্যতা মেলেনি বটে তবে কিছুটা আলামত পাওয়া গেছে বিসিক এলাকা ঘুরেফিরে।

সেখানকার বেশ কয়েকেটি সূত্র, যারা সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত, এধরনের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, একটি রাজনৈতিক মহল থেকে তাদের ঘনিষ্টরা এধরনের আশঙ্কা বা সম্ভাবনার কথা আভাস দেয়ার পরই তারা বেশ নড়েচড়ে বসেছে। উদ্বিগ্নতার আলোকে এই তথ্যের সত্যতা আরও ষোলআনা যাচাই করতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখায় সেখান থেকেও অভিন্ন আভাস পেয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।

এদের মধ্যেকার একটি সূত্র জানায়, বিসিক নিয়ে উত্তেজনায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন মহলের সাথে সেখানকার ফরচুন সু কোম্পানির চেয়ারম্যানের মতবিরোধ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অবশ্য সংঘাত-হামলা-মামলার প্রেক্ষাপটে তৃতীয় একটি মহল এই নাশকতার জন্ম দিয়ে দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেরা নিরাপদ দূরত্বে থাকার কৌশল নিতে পারে। সম্ভাব্য সেই ধ্বংসযজ্ঞের টার্গেট হতে পারে ফরচুন সু কোম্পানিসহ এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তার সমর্থনকারী সহযোগী কোনো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। নতুবা ফরচুনের মালিক অথবা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের যাতায়াতে বহনকারী গণপরিবহনের ওপর চোরাগুপ্ত হামলা এমনকি অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা সংঘঠিত করার বিষয়টিও নাশকতার পরিকল্পনায় আমলে আনা হতে পারে। আবার সম্ভাবনাও রয়েছে ফরচুন সু কোম্পানির মালিক মিজানুর রহমান সমর্থিত বিসিক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির বিরোধী অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আত্মঘাতী নাশকতা চালিয়ে দায়ভার বিপরীতমুখী ঠেলে দিতে পারে। যাতে ফরচুন সু কোম্পানির মালিককে গুরুতর মামলায় ফাঁসিয়ে বরিশাল ছাড়া করতে সহায়ক পন্থা দুর্বৃত্তদের বিবেচনায় থাকাটাও সন্দেহ গভীর করে তুলেছে। ঘুরেফিরে সবারই অভিন্ন সন্দেহের বার্তা হচ্ছে, নাশকতার মূল টার্গেটেই হতে পারে ফরচুন তথা শিল্প উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান। আজ শনিবার দুপুরে প্রাসঙ্গিক এই বিষয় নিয়ে সেলফোনে মিজানুর রহমানের সাথে বরিশালটাইমস’র পক্ষ থেকে আলাপকালে এধরনের নাশকতার সম্ভাবনার কথা বিভিন্ন মহল থেকে তাকে অবগত করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বলে জানালেন।

আরও পড়ুন…

# বরিশাল বিসিক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের বৈঠক, বাইরে ছাত্রলীগের মহড়া

বিসিকে সরেজমিন ঘুরে যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে এধরনের খবরের সর্বত্র এক ধরনের আলামত হিসেবে সেখানকার কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীদের সতর্ক অবস্থান দেখা যাওয়াসহ অজ্ঞাত পরিচয় লোক দেখলে সন্দেহের চোখ অপলক দৃষ্টি ফেলার আলামত নজরে পড়ে। বিশেষ করে বিশ্বখ্যাত সু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সু কোম্পানি ও তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সু কোম্পানির কারখানা দুটির সেই কোলাহল পরিবেশের বদলে বর্তমানে নিস্তব্ধতা পরিলক্ষিত হয়।

প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ নেওয়া হয়েছে সেখানে প্রবেশেসহ আগন্তুক লোক দেখামাত্র পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার তাগিদা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, শীর্ষ সারির কোনো কর্মকর্তা বা মালিকপক্ষ তাদের এই প্রতিষ্ঠানে গত দুদিন ধরে আসা-যাওয়া বন্ধ রেখেছেন। বলা যায়, প্রধান ফটক একেবারেই রুদ্ধ, ভেতরে কেউ আছে কিনা বা উৎপাদন কাজ চলছে কিনা, তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। বিসিকের সর্বত্রই একই পরিবেশ বিরাজমান।

স্থানীয় একাধিক সূত্র অভিন্ন ভাষায় জানায়, গত ২০ জানুয়ারী রাতে ফরচুন সু কোম্পানির মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহ , থানা ঘেরাও এবং মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আসামীর তালিকা দীর্ঘায়িত হওয়ায় এমনিতেই গ্রেফতার আতঙ্ক। সেইসাথে একদল রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের মহড়ায় বিসিক এখন একেবারেই স্তব্ধ। সেই মুহূর্তে নাশকতার খবর বিরজমান আতঙ্ক থেকে সন্দেহ প্রবলভাবে ভর করেছে- কখন কী ঘটে এমন শঙ্কায়। যদিও সাম্প্রতিক উত্তেজনার আলোকে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। নাশকতার খবর উড়ো না গুজব হিসেবে ছড়িয়ে নতুন করে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টির পেছেনে কোনো মহল জড়িত কিনা সেই বিষয়টি নিয়েও কোনো কোনো মহল সন্দেহ পোষণ করছে।

আরও পড়ুন…

ইভটিজারকে রক্ষায় বরিশালে লঙ্কাকান্ড, স্তম্ভিব নগরীতে ধিক্কার

অবশ্য মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান বরিশালটাইমসকে আজ শনিবার পড়ন্ত দুপুরে জানালেন, এধরনের নাশকতা সৃষ্টির সম্ভাবনার তথ্যাদির খবর তার জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি হালকাভাবেও নিতে নারাজ। এই শীর্ষ নগর পুলিশ কর্মকর্তার ভাষায়, পুলিশ রুটিনমাফিক দায়িত্ব যেভাবে পালন করছে তা সতর্কতা নিয়েই। সেই পরিস্থিতিতে দুর্বৃত্তায়নের পথে নাশকতা ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থার জনৈক এক কর্মকর্তার সাথে

নাশকতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশে অপারগতার শর্তে জানালেন, তাদের কাছে এধরনের তথ্য না থাকলেও বিসিক নিয়ে উত্তপ্ত বরিশাল পরিস্থিতিতে এধরনের আশঙ্কা অবান্তর নয়।

সার্বিক পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে তাদের একাধিক সোর্স মাঠে কাজ করছে, পরিবেশ উপলব্ধি ও কিছু ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে।’

25 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন