২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শ্রেষ্ঠ গবেষণা লাইব্রেরি

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:০৭ অপরাহ্ণ, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত’- এমন করেই রবীন্দ্রনাথ লাইব্রেরির কথা তুলে ধরেছেন। পৃথিবীর সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শিক্ষাটাই ছিল মূলে।

হাজার বছর ধরে পৃথিবী শাসন করা সম্রাট রাজাধিরাজরা প্রত্যেকেই তাদের সাম্রাজ্যে গড়ে তুলেছিল বিশাল বিশাল লাইব্রেরি। জ্ঞানচর্চায় নিবেদিত জনগণ সেখান থেকে আহরণ করত হৃদয়ের খোরাক। বিশ্বের প্রাচীন সব স্থাপনাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন যুগের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ লাইব্রেরিগুলো এক অনন্য স্থাপত্য।

আধুনিককালে পৃথিবীর সব দেশেই গড়ে উঠেছে বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ সব লাইব্রেরি। কোথাও প্রাচীন সে লাইব্রেরিটিকেই নতুন করে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শতবর্ষের সংস্কৃতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত তুরস্কের সুপ্রসিদ্ধ এমন কিছু লাইব্রেরি নিয়েই আজকের আয়োজন।

বিপুল পরিমাণের বই ও ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগারগুলো গবেষকদের জ্ঞান আরাধনার সুন্দর ও অনিন্দ্যম জায়গা। প্রতিটি গ্রন্থাগারেই রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ইন্টারনেট সুবিধাসহ দীর্ঘ সময় পড়ে ক্লান্তি কাটাতে আছে কফিশপের ব্যবস্থা। এখানে ইস্তাম্বুলের প্রসিদ্ধ আটটি লাইব্রেরির কথা তুলে ধরা হল-

SALT Galata
অবসর সময় কিংবা ব্যস্ত জীবনে ছুটির দিনটি ভালো কাটুক এটা কেইবা না চাই। তাই টুকটাক পড়াশোনা এবং নির্ঝঞ্ঝাট একটি পরিবেশ ভালোভাবে উপভোগ করতে আপনার জন্য সবচেয়ে সুন্দর লাইব্রেরিগুলোর একটি ‘সালট গালাটা’। অনিন্দ্য সুন্দর এ লাইব্রেরিটি পুনরুদ্ধারকৃত তুরস্কের সাবেক অটোমান ব্যাংক ভবনে অবস্থিত।

দ্বিতল এ গ্রন্থাগারে রয়েছে শহরের সবচেয়ে দ্রুততম ইন্টারনেট সংযোগ। আছে ইংরেজি, তুর্কি এবং ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় লিখিত বইগুলোর একটি বিস্তর সম্ভার। নিচতলার আর্ট গ্যালারি, বুকশপ এবং খোলা ছাদের সঙ্গে একটি সুদৃশ্য ক্যাফে লাইব্রেরির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে কয়েকগুণ।

সেখানে গিয়ে দুপুরের লাঞ্চ বা রাতের ডিনার নিয়ে অত ভাবার কিছু নেই। আধুনিক তুর্কি রেস্টুরেন্ট Neolokal আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত।

The Vitali Hakko Creative Industries Library
ইস্তাম্বুলের এশীয় সাইড নকাক্সেটেপে স্থাপত্যগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার নিদর্শন হিসেবেই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক ভাক্কো ফ্যাশন সেন্টার। এই অতি আধুনিক ও আলোকজ্জ্বল ফ্যাশন সেন্টারেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে Vitali Hakko Creative Industries Library| হালের আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্থ তুর্কিদের প্রিয় জায়গা ভাক্কো।

সেখানে গেলেই এক চক্কর ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে লাইব্রেরিটি। সমৃদ্ধ এ গ্রন্থাগারটিতে আপনি পাবেন ফ্যাশন, শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য, নকশা, ফটোগ্রাফি, চলচ্চিত্র এবং আরও নানা বিষয়ে লিখিত চমৎকার সব বই। মাঝে মাঝেই তুরস্কের উঠতি নতুন যুবা ছেলেমেয়েদের দারুণ সাহিত্য আড্ডা জমে ওঠে এখানে।

American Research Institute in Turkey – Istanbul
তুরস্কের আমেরিকান রিসার্চ ইন্সটিটিউটের লাইব্রেরিতে প্রায় ১৪,০০০ ভলিউম এবং জার্নাল আছে। যা বাইজেন্টাইন, অটোমান এবং আধুনিক তুর্কি যুগের বিস্তৃত দলিল।

লাইব্রেরিটি ইংরেজি ভাষাভাষী পণ্ডিতদের জন্য অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকেন্দ্র। আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণার জন্য প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর ক্যাটালগ ব্রাউজিংয়ে রয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ (DLIR) সার্ভার। তুরস্কের আমেরিকান রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআইটি) একটি নন প্রফিট শিক্ষা কেন্দ্র।

যা মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কিত উত্তর আমেরিকার ও তুর্কি গবেষণা ও বিনিময়কে উৎসাহিত করার জন্য নিয়মিত চলে আসছে।

Ataturk Kitaplig
১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ’আতাতুর্ক কিটাপ্লিগ’ মূলত একটি ইন্সটিটিউট। পরবর্তী সময়ে এটিকে লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করা হলে শহরের অন্যান্য লাইব্রেরিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়। নতুন অবকাঠামো দিয়ে এটিকে লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করা হয় ১৯৮১ সালে। নির্মাণের সময় গ্রন্থাগারটিতে প্রচুর জানালা রাখা হয় এবং নতুন শৈলীতে এটি একটি স্থাপত্যমূলক দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠে।

বহু জানালা থাকায় দর্শনীয় এ স্থাপত্যের ভেতর থেকেই Bosphorus-এর চারপাশের চমৎকার দৃশ্যগুলো চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাঠক ও দর্শনার্থী উভয়েই খুব দারুণভাবে উপভোগ করতে পারে Bosphorus-এর নান্দনিক সেই দৃশ্য। লাইব্রেরিটিতে ইংরেজি বইয়ের প্রচুর সম্ভার না হলেও, অটোমান সময়ের প্রথম কিছু পত্রিকা, পোস্টকার্ড এবং মানচিত্রের সংগ্রহগুলো খুব বেশি মূল্যবান।

Ahmet Hamdi Tanpinar Literature Museum Library
তুরস্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও ঔপন্যাসিক আহমেদ হামদি তানপিনরের নামেই এ লাইব্রেরির নামকরণ করা হয়েছে। ১৯ শতকে প্রতিষ্ঠিত আহমেদ হামদি তানপিনার সাহিত্য জাদুঘর গ্রন্থাগারটি গুলহানে পার্কের পাশে টপকাপি প্রাসাদের আলয় কোস্কুতে (আলয় মনোর) অবস্থিত।

বিস্তৃত এ গ্রন্থাঘারের কর্নারগুলোতে রয়েছে বেশ কটি সুদৃশ্য গ্যালারি। যেখানে তুরস্কের বিখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিকদের জীবনের নানা সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়। এখানে শিল্প সাহিত্য এবং অন্যান্য বিষয়ে ৮,০০০-এর বেশি বই আছে।

ইস্তাম্বুলের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং কৃষ্টি কালচারের ওপর লিখিত ১০০০-এর বেশি বইয়ের সন্ধান মিলবে সেখানে। এ ছাড়া লাইব্রেরির একাংশে রয়েছে একটি আধুনিক কনফারেন্স রুম। যা বিভিন্ন সেমিনার, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং প্রকাশনা উৎসবে ব্যবহার করা হয়।

Beyayit State Library
১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক বায়াজিট স্টেট লাইব্রেরি ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থাগারগুলোর একটি। সম্প্রতি একটি পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনাতে সংযুক্ত হওয়ায় সমসাময়িক স্থাপত্যের সঙ্গে মিল রেখে এটিকে নতুন করে তৈার করা হয়েছে। গ্রন্থাগারটিতে আধুনিক তুর্কি প্রকাশনা এবং প্রাচীন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

অটোমান যুগে লিখিত অটোমান, আরবি ও ফারসি ভাষার অন্যান্য বিশেষ পাণ্ডুলিপিও রয়েছে এখানে। বায়ু নিয়ন্ত্রিত কাচের গ্লাসের ভেতর খুব যত্নসহকারেই রাখা আছে ঐতিহাসিক দস্তাবেজগুলো।

Central Library of Istanbul University
সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অব ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি তার চিরসবুজ ক্যাম্পাস ও ঐতিহাসিক ভবনগুলোর জন্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এক কথায় অনন্য চিত্তাকর্ষক একটি লাইব্রেরি। এটি তুরস্ক ইউনিভার্সিটির সবচে বড় এবং পুরনো লাইব্রেরি। এর সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৫ শতকে তুর্কি ও বিদেশি ভাষায় রচিত তুর্কি প্রজাতন্ত্রের মুদ্রিত কাজ এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো।

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন