২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

সরকারি হাসপাতাল অভ্যন্তরে ছাত্রলীগ নেতা রাজনৈতিক কার্যালয়!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: হাসপাতালের কক্ষ দখল করে রাজনৈতিক কার্যালয় বানিয়েছেন জামালপুরে শহর ছাত্রলীগ নেতা সাকিব। একই সাথে এই ছাত্রলীগ নেতার বাবা স্থানীয় সদর হাসপাতালের বাবুর্চি কিরণ আলীও হাসপাতালের জমি দখল করেছেন। সেখানে বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাদের নোটিস দিয়ে স্থাপনা সরিয়ে নিতে দাপ্তরিকভাবে চাপ দিলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না তিনি। সূত্রে জানা গেছে, বাবুর্চি কিরণ আলী বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি জামালপুর সদর হাসপাতাল শাখার সভাপতি। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করেই তিনি এসব স্থাপনা তৈরি করেছেন।

বিভিন্ন মাধ্যম ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের সুইপার কলোনির ঠিক পাশেই একটি টিনের বড় ঘর নির্মাণ করে বেশ কয়েক মাস ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন বাবুর্চি কিরণ আলী। সামনে থেকে একটি ঘর দেখা গেলেও কৌশলে চারদিকে টিনের ছাউনি দিয়ে ঘরের ভেতরে পেছনের দিকে অনেক জমি দখল করেছেন। তাঁর বাসার একটি কক্ষে করোনা রোগীদের খাবার সরবরাহের প্লাস্টিকের বাটি, পানির বোতল ও অন্যান্য জিনিসপত্র মজুদ রাখা হয়েছে। বাসা থেকেই বর্তমানে করোনার রোগীদের রান্না করা খাবার তৈরি ও সেই খাবার শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি থাকা রোগীদের কাছে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, বাবুর্চি কিরণ আলীর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সাকিব জামালপুর শহর ছাত্রলীগের সদস্য ও বাংলাদেশ স্কুলছাত্র কার্যনির্বাহী সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। তাকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাসার একটি কক্ষে একটি অফিসও করে দেওয়া হয়েছে। কিরণ আলী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নেতা হওয়ায় এবং তাঁর ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশীর্বাদ থাকায় হাসপাতালের জমি থেকে তাঁকে উচ্ছেদও করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরকারি জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে বাসাবাড়ি নির্মাণ করা ঠিক হয়নি স্বীকার করে বাবুর্চি কিরণ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতালের সুইপার কলোনির পাশে আমি যে বাসায় থাকতাম সেটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এর আগের সহকারী পরিচালকের কাছ থেকে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে পরিত্যক্ত বাসার পাশেই আমি নিজের টাকা খরচ করে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটি টিনের ঘর তুলেছি। এখান থেকে বাসাবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বর্তমান সহকারী পরিচালক আমাকে নোটিস করেছেন। থাকতে না দিলে তো আর জোর করে থাকা যাবে না।’

বাসায় করোনার রোগীদের খাবার তৈরির অভিযোগ প্রসঙ্গে কিরণ আলী বলেন, ‘আগে হাসপাতালের রান্নাঘরেই করোনার রোগীদের খাবার রান্না করা হতো। এখন করোনা রোগী কমে গেছে। তাই কিছুদিন ধরে আমার বাসা থেকেই খাবার তৈরি করে দিচ্ছি।’ তা ছাড়া ঘরের একটি কক্ষে ছেলের ছাত্রলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। তাই তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বাসার ওই কক্ষে মাঝে মধ্যে আড্ডা দেয়।’

জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ভেতরে সরকারি জমি থেকে স্থাপনা সরিয়ে ফেলার জন্য বাবুর্চি কিরণ আলীকে ইতিপূর্বে তিনবার নোটিস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও তিনি সেখানে রয়ে গেছেন। প্রয়োজনে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে আইন প্রয়োগ করে তাকে সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে।’

হাসপাতালে রান্না না করে বাবুর্চির বাসায় করোনা রোগীদের খাবার রান্না করা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন- ‘এই কাজটি তিনি করতে পারেন না। করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন রোগীদের খাবার হাসপাতালের রন্ধনশালায় রান্না করার কথা। বাবুর্চি তার বাসায় রান্না করে খাবার সরবরাহ করে- বিষয়টি নজরে আসেনি। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

2 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন