২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

সৈকতে কুকুরের সঙ্গে ঘুমানো শিশুটির জায়গা হলো ডিসির বাংলোতে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৪ অপরাহ্ণ, ২৮ মার্চ ২০২০

বার্তা পরিবেশক, অনলাইন :: করোনার সংক্রমণ রোধে পাঁচদিন ধরে কক্সবাজার সৈকতসহ পর্যটন স্পটে বেড়ানো নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে সবধরনের পরিবহন, দোকানপাট। ফলে একপ্রকার লকডাউন অবস্থায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, দিনজীবী ও পর্যটক কিংবা খাবার হোটেলের উচ্ছিষ্ট চেয়ে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। তাদেরই একজন অসহায় শিশু ইমন। লকডাইন অবস্থায় অন্য কোথাও না গিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে কুকুরের সঙ্গে অভুক্ত ঘুমিয়ে দিন পার করছিল ইমন।

টহলে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ছালা মুড়িয়ে কুকুরের সঙ্গে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটিকে দেখে মুঠোফোনে ছবি ধারণ করেন কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। তা তিনি ২৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে ফেসবুকে আপলোড করে লেখেন ‘সুগন্ধার মোড়ে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটি কোথায় যাবে?’

এতে অনেকে কমেন্ট করলেও ইমনের সহায় হতে কারো তৎপরতা দেখা যায়নি। কিন্তু ২৭ মার্চ রাত ১১টায় আবারো টহলে গিয়ে একইভাবে ইমনকে আবিষ্কার করেন মানস বড়ুয়া। আরেকটি ছবি তুলে আপলোড করে লেখেন, ‘ইমন আজও ঘুমিয়ে আছে।’

এটিই জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় শিশুটিকে ডিসির ডাকবাংলোতে নিয়ে পরিচ্ছন্ন করে নতুন জামা পরিয়ে পছন্দের খাবার খাওয়ান জেলা প্রশাসক। তা জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট ও এডিসির ফেসবুক আইডিতে প্রচার পেলে সব শ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

ওসি মানস বড়ুয়া জানান, ঘুম ভাঙিয়ে শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তার নাম ইমন এবং বাড়ি মহেশখালী দ্বীপে। একটি মাদরাসায় পড়তো। মাদরাসার মৌলভী তাকে পিটুনি দেয়ায় সে পালিয়ে কক্সবাজার আসে আর সাগরপারে আশ্রয় নেয়। ১০-১২ দিন ধরেই নানাজনের কাছে চেয়ে খেয়ে না খেয়ে সেখানেই থাকছে। এটা জানার পর সঙ্গে থাকা শুকনো খাবার দিয়ে তাকে নিয়ে আসতে চাইলেও সে রাজি হয়নি। আবার শহরজুড়ে লকডাউন অবস্থা এবং চারপাশে আতংক থাকায় জোরও করা হয়নি। তার জন্য মন খারাপ লাগছিল বলেই ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছিলাম।

এদিকে শিশু ইমনকে নিয়ে আসার সবিস্তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (প্রটোকল শাখা, পর্যটন) মো. ইমরান জাহিদ খান লিখেছেন, পর্যটনের দায়িত্ব পাওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয় গোষ্ঠীর নানা শ্রেণির লোকের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। পর্যটননির্ভর খেটে খাওয়া এ লোকগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেছে করোনাভাইরাসের আক্রমণে। সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার মনে হয় বিচে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট বাচ্চাগুলো। বিশেষত যখন সে অনাথ। এই দুর্দিনে ফাঁকা বিচে কুকুরগুলোর সঙ্গে ছবির শিশুটি একা রাত যাপন করে চলেছে গত ৮/১০ দিন ধরে। বিচকর্মীদের বদান্যতায় কোনো বেলায় খাবার জোটে, কোনো বেলায় জোটে না।

আজ (২৭ মার্চ) মধ্যরাতে অনলাইনে ছেলেটির ব্যাপারটা নজরে আসে ডিসি স্যারের। ওই রাতেই ডিসি স্যার বাচ্চাটিকে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখতে বলেন। বিচকর্মীরা শুরু করে দেয় খোঁজ করার কাজ। আমি সহকর্মী বড় ভাই সৈয়দ মুরাদকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেই খোঁজাখুঁজিতে। অবশেষে আমাদের এক বিচকর্মী তাকে খুঁজে পায়। এরপর ডিসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ওকে নিয়ে আসি ডিসি স্যারের বাংলোয়। এরপর পরিচ্ছন্ন করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করানো হয়। সঙ্গে ওর জীবনের গল্প শোনা হয়।

3 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন