২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

হারিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রাচীন মসজিদ

বরিশালটাইমস, ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:২০ অপরাহ্ণ, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২

হারিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রাচীন মসজিদ

জিয়াউল হক,বাকেরগঞ্জ,বরিশাল।। জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর গ্রামের মুসলমানদের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন।

একই স্থানে ৫ শত বছরের এত পুরনো তিনটি মসজিদ যা অভূতপূর্ব বলে অনেকেই ধারণা করছেন। অথচ এই মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ রক্ষায় নেই কোন উদ্যোগ। অবহেলা অযত্নে যা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। চলছে প্রাকৃতিক ক্ষয়।

বাকেরগঞ্জে ৫শ বছর পূর্বে সুলতানী শাসনামলে স্থাপিত এই তিনটি মসজিদ, যা আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মুসলিম স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের কথা। আর এ মসজিদগুলো পারশিবপুর সিকদার বাড়ি জামে মসজিদ হিসেবে নামকরণ হয়েছে।

এই তিনটি মসজিদ প্রায় পাঁচ শত বছর আগের নির্মিত। সুলতানী শাসনামলে মামু তক্কী নামের এক ব্যক্তি পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাকেরগঞ্জ থেকে মির্জাগঞ্জ সড়কের পাশে জঙ্গল পরিস্কার করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। যা এখন পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের পারশিবপুর বড় সিকদার বাড়ি নামে পরিচিত।

বাকেরগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটি এক গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদ, যার মধ্যে পাদ্রীশিবপুরে এই তিনটি মসজিদ আজো টিকে আছে। ধারণা করা হয়, ১৬ শতকের শেষের দিকে এই মসজিদ গুলো নির্মাণ করা হয়।

যার নির্মাণশৈলী সবগুলোরই একই রকম। তৎকালীন সময়ে এদেশে যাঁরা ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন তারাই হয়তো এগুলো নির্মাণ করেছেন। ঐসময়ে জনসংখ্যা কম থাকার কারনে আকারে এগুলো ছোট্ট করা হয়েছিল।

গ্রামীন জনপথে মামু তক্কী ইসলাম ধর্মের প্রচারণা শুরু করেন। তখন তিনি একটি মসজিদে ধ্যানে বসতেন। যেটির একটি মাত্র দরজা ছিল। এর পাশেই অপর একটি মসজিদ তার ভক্ত মুরিদান ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন।

তারা সেখানে নামাজ আদায় সহ ইবাদত বন্দেগি করতেন। পাশাপাশি তখনকার সময় মামু তক্কী একটি দীঘি ও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য।

মামু তক্কী আগমনের পূর্বে দুটি মসজিটি ঠিক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক কোন ইতিহাস পাওয়া না গেলেও মসজিদটির গঠনশৈলি ও নির্মানের উপাদান মোগল আমলে নির্মিত মসজিদ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সে হিসেবে মসজিদগুলো প্রায় পাঁচ শত বছরেরও বেশি পুরনো। পাঁচ’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে আজো দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদগুলো বর্তমানে পারশিবপুর সিকদার বাড়ি জামে মসজিদ নামেই পরিচিত। স্থানীয়দের মতে জেলার সবচেয়ে পুরনো মসজিদ এর মধ্যে এই তিনটি অন্যতম।

এখনো মামু তক্কী নির্মিত মসজিদে প্রতিদিন মুসুল্লীগন নামাজ আদায় করেন। সিকদার বাড়ির লোকজন মসজিটি সংস্কার করে একটি বারান্দা নির্মাণ করেছেন। মসজিদটির পূর্ব দিকে একটি দরজা উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা রয়েছে।

মসজিদটি প্রায় ৪০ ফুট উচু। এ উপরে রয়েছে বিশাল গম্বুজ ও দুটো মিনার।দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বর্তমানে দরজা-জানালার কপাট ও পিলারগুলোর অস্তিত্ব ধ্বংসের শেষ পর্যায় পৌঁছেছে।

একটি গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি কোনো রড-সিমেন্ট ছাড়াই চুন -সুরকি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৬০ইঞ্চি পুরো। আর মসজিদের ভিতর দিকে রয়েছে নানা কারুকার্য খচিত মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রাচীনতম নিদর্শন।

অপর দুটি মসজিদের অস্তিত্ব বিলিনের পথে। বনজঙ্গলে ঘিরে হয়ে গেছে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। মসজিদগুলোর পূর্ব পাশে মামু তক্কীর সহ পূর্ব পুরুষদের বেশ কয়েকটি কবর রয়েছে। সামনে রয়েছে বিশাল এক দীঘি। এ দীঘিটি মসজিদ নির্মাণের সময় খনন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মসজিদের অনেক সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে আর অল্প দিনের মধ্যেই বাকিটা শেষ হয়ে যাবে। তবে মুসলিম সভ্যতার এ ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি।

মসজিদ তিনটি দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি পরিত্যক্ত মসজিদ দুটি সংরক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের ইতিহাস, মুসলমানদের অবদান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসি।

16 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন