৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

কেমন আছে বাংলাদেশের জনগণ?

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:১৯ অপরাহ্ণ, ০৩ জুলাই ২০২০

এস এম মনিরুজ্জামান:: জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক জাতির নাম বাঙালী জাতি। দীর্ঘ শাসন শোষণ এর কবলে, নিজেদের জলাঞ্জলি দিয়ে রচিত হয়েছে এ জাতির বিরল ইতিহাস। কালের সাক্ষী হয়ে আছে এদেশের জনপদ। কি না দেখেছে এদেশের জনগণ?  যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়াবার পূর্বেই, খড়া, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, মহামারী একের পর এক আষ্টেপৃষ্টে জেঁকে বসে আছে এ দেশের জনগণের ওপর। আমরাও হাল ছাড়ার পাত্র নই। সব কিছুই মোকাবেলা করেছি শক্ত হাতে। সব সমস্যার সামাধান একই পন্থায় সম্ভব নয়। ঠিক যখন যে পন্থা অবলম্বন করা দরকার সেভাবেই করা হয়েছে। আর এখনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে একটি প্রশ্ন জেগে ওঠে মনে। তা হলো কেমন আছেন বাংলাদেশের জনগণ? আসলে কি ভালো আছে? এ প্রশ্নটি বারবার আমাকে পীড়া দেয়। আমরা প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছি। কেউ জিজ্ঞেস করলেই অনায়াসেই বলে ফেলি “ভালো আছি”। আসলে এটা একটি ডাহা মিথ্যা কথা। কি-ই বা আমি, আর কি-ই বা তুমি অথবা সে। আসলে ভালো নেই বাংলার আপামর জনগণ।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন আছে সবচেয়ে বেশি কষ্টে। না পারছে কারো কাছে হাত পাততে না পারছে কাউকে মুখ ফুটে বলতে। শুধু নিজের মাঝে হাহাকার নিয়েই বেঁচে আছে প্রতিটি পরিবার। রাষ্ট্র যন্ত্রের যে দায়িত্ব, সেখানে তারা কতটা সফল, কেবল আপামর জনগণ-ই তার উত্তর ভালো দিতে পারবে। অসম্ভব রকম দুর্নীতির যাতাকলে প্রতিটি সেক্টর। আর তার খেসারত গুণতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের। সুষ্ঠু বন্টন নীতির অভাবে কেউ পাচ্ছে তো পাচ্ছে -ই। আবার কেউ পাচ্ছে না তো পাচ্ছে -ই না। এটা হলো বাস্তবতা।

স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ কেবল স্বপ্নেই দেখি, বাস্তবতা ভিন্ন। ইতিমধ্যেই মহামারীর তান্ডব টের পেয়েছে বাংলাদেশের জনগণ। কাহারও হাতে কোন কিছুই করার নেই। শুধু হাক-ডাক দিয়েই যে মহামারী নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায় না, তা এখন এদেশের হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চাটাও বুঝে গেছে। তাই অযথা রাগঢাক না পিটিয়ে, জনগণ বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জটাই এখন বড় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, ৫০ হাজার পরিবার ঢাকা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছে। হয়তো সংখ্যায় হিসেব করলে কয়েকগুণ বেশি বৈকি কম হবে না। প্রশ্নটা হলো কেন এতগুলো পরিবার গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছে?

শুধু কি করোনার ভয়ে? উত্তর টা খুব সহজ শুধু করোনার ভয়ে নয়। জীবন চালোনোটাই দুঃসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। আর্থিক সংকটময় জীবন। বাড়িওয়ালার বাড়ি ভাড়া না দিতে পারলে কতদিন সে মানবে? চাকরি নেই, ব্যবসা মন্দা, আয়ের পথ বন্ধ। তাইতো সাময়িক উপশমের জন্যই হয়তো ঘরে ফেরা। আসলে এটাই তো সমাধান নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পরার উপক্রম। বাচ্চাদের প্রশ্ন আমরা কি আর কোন দিন স্কুলে যেতে পারবো না? কি আছে জবাব দেয়ার। ধৈর্য ধরে বসে থাকা ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে?

খেটে খাওয়া মানুষগুলো নিজের মতো কিছু একটা কাজ জোগাড় করে চলে যাচ্ছে। হয়তো পেশার পরিবর্তন করে অনেকেই মৌসুমী শ্রমিকের স্থান দখল করেছে, কিন্তু এটাতো স্থায়ী সমাধান নয়। যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত -ই এখন সাধারণ মানুষের বাচার পথ দেখাতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে সৃজনশীল কর্মমুখী জনপদ তৈরি করে ভূমিকা রাখতে পারে।

একটি বিশেষ শ্রেণিকে প্রাধান্য দিয়ে যেভাবে গতানুগতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল, তা পরিহার করে সমগ্র মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া অতীব জরুরি।

কৃষি ব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সকলের সম্পৃক্ততা থাকাটা অত্যাবশ্যক। রাষ্টীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সমগ্র বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে আয়বর্ধক কর্মসূচি। তাহলেই বাচবে সাধারণ জনগণ। দু’ টাকার চাকরি করে, আর কোর্ট প্যান্ট হাঁকিয়ে বাবুগিরি আসলে লৌকিকতাই বেশি দেখায়। বাস্তবতায় আসলে আমরা কোথায় আছি সেটা বিবেচনা করতে হবে।

চাকরি নয়, উদ্যোক্তা এই শ্লোগান টি সাধারণ মানুষের মাঝে উজ্জীবিত করতে হবে। আর সেটা করতে হবে স্ব স্ব এলাকায় থেকেই। শুধু ঢাকামুখী হয়ে জনভোগান্তি না বাড়িয়ে স্ব স্ব এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।

কলাম লেখক

7 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন