২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

মেয়র কামালের ষড়যন্ত্র ফাঁস!

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২৩ অপরাহ্ণ, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬


বিসিসি থেকে বিএনপিপন্থী
কাউন্সিলরদের কৌশলে সরিয়ে আ’লীগের
সাথে গোপন ঐক্যের চেষ্টা


বরিশাল: বরিশাল বিএনপি নেতা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবীব কামাল কী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এমন একটি গুঞ্জন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ কেএম শহীদুল্যাহর বরখাস্ত আদেশ স্থগিত বিষয়টি নিয়ে কামালের রহস্যজনক মনোভাবের কারণে এমন গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। তাছাড়া কামাল অনেক আগে থেকেই বিএনপির রাজনীতির মাঠ ছেড়ে সিটি কর্পোরেশনমুখী হওয়ায় নানা প্রশ্নে সমীকরণ সামনে এসেছিল।

অবশ্য সে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা বিষ্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করে সংবাদও প্রকাশ করেছিল। প্রকাশিত সেই সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘মেয়র কামালের আ’লীগে যোগদান’। সেই সময় বিএনপির রাজনৈতিকদের মাঝে কামামলকে নিয়ে দেখা দিয়েছিল নানা প্রশ্ন।

অবশ্য সেই সময় বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুলে কামাল নিরব থাকায় শেষবধি বেশিদূর যায়নি। কিন্তু এবারে খোদ দলীয় ঘরনার নেতাকর্মী অর্থাৎ তার কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে ঢের বিতর্ক সৃষ্টি করলেন কামাল। সর্বশেষ প্যানেল মেয়র ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেএম শহীদুল্যাহর বরখাস্ত আদেশ উচ্চ আদালত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না কামাল। করছেন নানা টালবাহানা। ফলে বিএনপিপন্থী মেয়ররের এমন আচরণ দলীয় ঘরনার কাউন্সিলরদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ফেলেছে। এমতাবস্থায় অনেকেই বলছেন-কামাল তার ঘরনার কাউন্সিলরদের বিসিসি থেকে বিতাড়িত করে সখ্যতা গড়ছেন আ’লীগপন্থীদের সাথে।

যার দরুণ সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নেমে মামলা জড়িয়ে পড়া বিএনপি নেতাকর্মী অর্থাৎ কাউন্সিলরদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির পদবঞ্চিত নেতা কামাল অনেক আগেই আ’লীগের সাথে আঁতাত করেছেন। এখন আ’লীগপন্থী কাউন্সিলরদের তার পাশে বসিয়ে চাইছেন মসনদটি শক্তভাবে আকড়ে ধরতে। তার এই মিশন বাস্তবায়ন করতে কৌশলে স্বঘরনার কাউন্সিলরদের বিতাড়িত করে আ’লীগের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

কারণ সাম্প্রতিকালে দেশের রাজশাহী, খুলনা, গাজীপুর, সিলেটসহ বিএনপিপন্থী মেয়রদের চেয়ারটি সরে যাওয়ায় আতঙ্কে ভুগছেন কামাল। তাছাড়া ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দফায় দফায় তদন্ত হওয়ায় আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে আ’লীগের সাথে ঐক্য এখন এক প্রকার জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। বিএনপি ঘরনার কাউন্সিলরদের সরানোর ষড়যন্ত্র এবং আ’লীগ দলীয়দের চাপ কামালকে ফেলে দিয়েছে বিপাকে। যে কারণে মেয়র কামাল এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন।

সূত্রমতে সম্প্রতি র‌্যাবের দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় প্যানেল মেয়র কেএম শহীদুল্যাহর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জগঠন হয়। সেই বিষয়টি মেয়র কামাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে লিখিত আকারে অবহিত করেন। একই সাথে বিএনপি ঘরনার অপরাপর অন্তত আরো ৮ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা থাকার বিষয়টিও জানিয়ে দেন। এরপরই গত মাসে প্যানেল মেয়র শহীদুল্যাহর বিরুদ্ধে বরখাস্তের আদেশ আসে। বাকি কাউন্সিলরদের ভাগ্য রয়েছে ঝুলে।

কিন্তু শহীদুল্যাহ বরখাস্তের আদেশ পাওয়ার পরপরই তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট করে দেন। অবশ্য ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত তার বরখাস্তের ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। তবে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসি করছেন মেয়র কামাল। শুধু এতেই থেমে থাকেন নি সেই সাথে কাউন্সিলর শহীদুল্যাহর ওয়ার্ডে দায়িত্ব দিয়েছেন পাশ্ববর্তী ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আ’লীগ নেতা মজিবর রহমানকে। ফলে কামালের বিএনপিবিরোধী মনোভাব অতি সহজেই প্রকাশ পেয়ে যায়।

এমতাবস্থায় বিএনপি ঘরনা কাউন্সিলরদের অভিব্যক্তি হচ্ছে, মেয়র কামালের সাথে আ’লীগের গভীর সখ্যতার বিষয়টি খোদ দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানতে পারায় তাকে এবার কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। তাছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না নামায় এখানকার নেতাকর্মীরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ। ফলে কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের দারস্থ হওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি কামালের অনুকুলে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সরোয়ার মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল এক বিএনপি নেতা বিসিসি কাউন্সিলর জানিয়েছেন, কামাল যে দলীয়দের সরিয়ে ক্ষমতাসীনদের পাশে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন তা নেতাকর্মীরা অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছেন।

যে কারণে কামালের দিক থেকে অনেক আগেই ব্যক্তি বিশেষ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ কেএম শহীদুল্যাহর বরখাস্তের আদেশ স্থগিত নিয়ে কামালের নাটকীয়তা তাদের আরো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় শহীদুল্যাহর ভাষ্য হচ্ছে- আদালতের নির্দেশ শর্তেও কেন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না এর যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মেয়র যেটা করছেন সেটা সম্পূর্ন আইনপরিপন্থী। বিষয়টি আদালতকে পরবর্তীতে অবহিত করা হবে। যদিও এক্ষেত্রে মেয়র কামালের ভাষ্য হচ্ছে, বরখাস্তের আদেশ স্থগিত রাখতে এক আইনজীবীর প্যাডে বার্তা এসেছে।

কিন্তু বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় বিবেচনায় ঝুলে আছে আদেশটি। তবে আদালত থেকেও যদি কোন বার্তা আসে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার সক্ষমতা রয়েছে বলে জানান কামাল। কিন্তু আ’লীগের সাথে সখ্যতা গড়ে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরদের বিতাড়িত করার হেতু কী এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই এড়িয়ে গেলেন তিনি।

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন