
১২ জুন, ২০২৫ ১২:২৯
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন - এমন বার্তাই দিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন। ’ তবে তারেক রহমানের ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সারের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা-তাহলে কি ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান?
বুধবার (১১ জুন) দেওয়া স্ট্যাটাসে আশরাফ কায়সার লেখেন, ‘তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন ৩৬শে জুলাই-এর আগেই। ’ এর একদিন আগে (১০ জুন) তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে আশরাফ কায়সার লেখেন, ‘আমার চোখে, গত ১০ মাসে নেতৃত্বের গুণাবলিতে তিনি দশ ধাপ এগিয়েছেন।
চেষ্টা করছেন রাজনীতির নতুন ব্যাকরণের সঙ্গে বিএনপিকে মানানসই করতে, সেইসঙ্গে তার সম্ভাব্য রাষ্ট্র পরিচালনা। প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে তার খোলাখুলি আলোচনা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে নতুন পথনির্দেশনা দেবে সেই প্রত্যাশায়। ’
বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক রহমান ৫ আগস্টের আগেই বাংলাদেশে ফিরছেন। তবে সুনির্দিষ্ট দিন ধার্য হয়নি বলে জানায় ওই সূত্রটি। এর আগে গত ৪ জুন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মো. তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে তারিক চয়ন তার ফেসবুক পেজে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
এতে দেখা যায় - উপস্থাপিকা সালাহউদ্দিন আহমদকে প্রশ্ন করেন, ‘তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন?’ জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন বলতে পারি যে উনি খুব শিগগিরই ফিরবেন ইনশাল্লাহ। তবে দিন-তারিখ বলতে পারবো না। ’ উপস্থাপিকা পুনরায় প্রশ্ন করেন, ‘তিন মাসের মধ্যে?’ জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তারও আগে। ’
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেছিলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের ঠিক পরদিনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, সেদিন যদি তিনি ফিরতেন, তাহলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত হতো। কিন্তু কেন সেই সময় দেশে ফিরলেন না তিনি, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডন থেকে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল, তা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপি কতটা নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে কিংবা নিজেদের অনুকূলে পরিস্থিতি এনে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ পরিচালনার ভার তুলে দিতে পারছে-এটি যেমন আলোচনার বিষয়, তেমনি একটি দলের সর্বোচ্চ নেতা দেশে না থেকে দল পরিচালনা করছেন কেন, সেই প্রশ্নও সমানভাবে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
চলতি বছর ৬ মে লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার সময়ও অনেকে আশা করেছিলেন তারেক রহমানও ফিরবেন। যদিও তার বদলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন।
সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘জুবাইদা রহমান ফিরেছেন, তারেক রহমানও ফিরবেন।
সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। কিছুদিন পর জুবাইদা রহমান আবারও লন্ডনে যাবেন এবং খুব দ্রুতই তারেক রহমানসহ দেশে ফিরে আসবেন। ’ ইতোমধ্যেই জুবাইদা রহমান লন্ডনে ফিরে গেছেন।
এতদিন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ছিল তার দেশে না ফেরার বড় কারণ। তবে সম্প্রতি সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
সর্বশেষ ২৮ মে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাতেও খালাস পান তারেক রহমান। এর মধ্য দিয়ে সব দণ্ড ও মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন তিনি। তার দেশে ফেরা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যদিও একটি প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে- তার দেশে ফেরার পথে বাধা কী? গত এপ্রিলে ব্রিটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ তারেক রহমানকে নিয়ে ‘ডেস্টিনি’স চাইল্ড’ বা ‘নিয়তির সন্তান’ শিরোনামে একটি কভার স্টোরি করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছিল, তখন তারেক রহমানই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। পত্রিকার নয়াদিল্লি ব্যুরোপ্রধান নম্রতা বিজি আহুজা সেখানে লেখেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ’
জাতিকে এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন এমন নেতা বাংলাদেশে বেশি নেই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের উপস্থিতি অতীব জরুরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জাতি, রাষ্ট্র এবং জনগণের সংকটে দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ও লেখক আমীন আল রশীদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে দল ও দেশের মানুষ চাইলেও তার পক্ষে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনা করা কঠিন হবে।
বয়সের চেয়েও বড় সমস্যা তার শারীরিক জটিলতা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অনেকগুলো বড় অসুখে ভুগছেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচন যেদিনই হোক, সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, সংসদীয় পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম দায়িত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়াটাও কঠিন হবে বলে মনে হয়।
তার মানে দলের দ্বিতীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হিসেবে তার ছেলে তারেক রহমানই যে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন- সেটি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি অন্য দল এমনকি যারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আছেন, সম্ভবত তারাও মনে করেন। ’
তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে এতদিন আলোচনায় থাকা তিনটি প্রধান বাধা ছিল—চারটি মামলায় সাজা, পাসপোর্ট জটিলতা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মামলাগুলোর রায় এখন তার পক্ষে এসেছে। তবে পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক এখনো আছে।
২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর তার পাসপোর্ট নবায়ন হয়নি। তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছেন।
বিএনপি দাবি করেছিল, পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলে তা দেখাতে হবে। কিন্তু সরকার সেটি কখনো প্রকাশ করেনি। বর্তমানে তার হাতে বৈধ পাসপোর্ট নেই, ফলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন আর পাসপোর্ট পাওয়া তেমন কঠিন হবে না।
সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কেবল একটি বিষয়ই গুরুত্ব পাচ্ছে-নিরাপত্তা। এর আগে এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকালে তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরও তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপরও কিছুটা নির্ভর করবে।
নির্বাচনের একটা পরিষ্কার রোডম্যাপ দিতে হবে। উনার মতো এত বড় একজন নেতার নিরাপত্তার ব্যাপারও আছে। যখন অন্তর্বর্তী সরকার একটা স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি দিতে পারবে, উনার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারবে তখন তিনি আসবেন। ’ সে সময় তিনি আরো জানান, ‘উনি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তা না।
তবে আমি যেটা বলছি, উনার মতো একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, যাকে দেশের ভেতরে এবং বাইরে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই তার কিছু আন্তর্জাতিক সিকিউরিটির ব্যাপার-স্যাপার আছে। ’
তারেক রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি আবারও সামনে আসে গত ২৭ মে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতারের পর। এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার মিশন নিয়ে নেমেছিল সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদরা। এতে অর্থ জোগান দিচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সুব্রত বাইনকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডনে পাঠিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। টার্গেট ছিল তারেক রহমানের জুমার নামাজে যাতায়াতের সময়। এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও।
এর আগে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান দেশে আসার আগেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। চিঠিতে তার বাসভবনের পাশাপাশি বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রেও গাড়িসহ পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের স্ত্রী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। চিঠিতে চার ধরনের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল- সশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশি পাহারা ও বাসায় আর্চওয়ে স্থাপন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা রয়েছে কি না—এই প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে কোনো সরাসরি মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে আসন্ন শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছেন তারেক রহমান।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারের শীর্ষ মহলের উদ্যোগেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েনের সময়েই এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনায় নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান উত্তরাধিকার সূত্রেই বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তাকে রাজনীতিতে আনতে দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের একটি পদ তৈরি করা হয়েছিল।
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার মতো তার বড় ছেলে তারেক রহমানও গ্রেফতার হন। মুক্তি পাওয়ার পর স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের মাঝে আর দেশে ফিরতে পারেননি।
তারেক রহমান লন্ডনে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমলে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়। তার অনুপস্থিতিতে পাঁচটি মামলায় সাজাও দেওয়া হয়। এরমধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তাকে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
তারেক রহমানের মামলার নিষ্পত্তি, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে কার্যত নিষ্ক্রিয়তা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন- সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোরালো আলোচনার বিষয়, ৫ আগস্টের আগেই কি সত্যি দেশে ফিরছেন তারেক রহমান? যদিও তার ফেরার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কেউ জানাতে পারছেন না, তবে সবকিছুই যেন ইঙ্গিত করছে, ফেরার দিন খুব বেশি দূরে নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন - এমন বার্তাই দিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন। ’ তবে তারেক রহমানের ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সারের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা-তাহলে কি ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান?
বুধবার (১১ জুন) দেওয়া স্ট্যাটাসে আশরাফ কায়সার লেখেন, ‘তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন ৩৬শে জুলাই-এর আগেই। ’ এর একদিন আগে (১০ জুন) তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে আশরাফ কায়সার লেখেন, ‘আমার চোখে, গত ১০ মাসে নেতৃত্বের গুণাবলিতে তিনি দশ ধাপ এগিয়েছেন।
চেষ্টা করছেন রাজনীতির নতুন ব্যাকরণের সঙ্গে বিএনপিকে মানানসই করতে, সেইসঙ্গে তার সম্ভাব্য রাষ্ট্র পরিচালনা। প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে তার খোলাখুলি আলোচনা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে নতুন পথনির্দেশনা দেবে সেই প্রত্যাশায়। ’
বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক রহমান ৫ আগস্টের আগেই বাংলাদেশে ফিরছেন। তবে সুনির্দিষ্ট দিন ধার্য হয়নি বলে জানায় ওই সূত্রটি। এর আগে গত ৪ জুন কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মো. তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে তারিক চয়ন তার ফেসবুক পেজে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
এতে দেখা যায় - উপস্থাপিকা সালাহউদ্দিন আহমদকে প্রশ্ন করেন, ‘তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন?’ জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন বলতে পারি যে উনি খুব শিগগিরই ফিরবেন ইনশাল্লাহ। তবে দিন-তারিখ বলতে পারবো না। ’ উপস্থাপিকা পুনরায় প্রশ্ন করেন, ‘তিন মাসের মধ্যে?’ জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তারও আগে। ’
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করেছিলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের ঠিক পরদিনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, সেদিন যদি তিনি ফিরতেন, তাহলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত হতো। কিন্তু কেন সেই সময় দেশে ফিরলেন না তিনি, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডন থেকে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল, তা এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপি কতটা নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে কিংবা নিজেদের অনুকূলে পরিস্থিতি এনে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ পরিচালনার ভার তুলে দিতে পারছে-এটি যেমন আলোচনার বিষয়, তেমনি একটি দলের সর্বোচ্চ নেতা দেশে না থেকে দল পরিচালনা করছেন কেন, সেই প্রশ্নও সমানভাবে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
চলতি বছর ৬ মে লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার সময়ও অনেকে আশা করেছিলেন তারেক রহমানও ফিরবেন। যদিও তার বদলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান শাশুড়ির সঙ্গে দেশে ফিরেছিলেন।
সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘জুবাইদা রহমান ফিরেছেন, তারেক রহমানও ফিরবেন।
সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। কিছুদিন পর জুবাইদা রহমান আবারও লন্ডনে যাবেন এবং খুব দ্রুতই তারেক রহমানসহ দেশে ফিরে আসবেন। ’ ইতোমধ্যেই জুবাইদা রহমান লন্ডনে ফিরে গেছেন।
এতদিন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ছিল তার দেশে না ফেরার বড় কারণ। তবে সম্প্রতি সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর বিষয়টি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
সর্বশেষ ২৮ মে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাতেও খালাস পান তারেক রহমান। এর মধ্য দিয়ে সব দণ্ড ও মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন তিনি। তার দেশে ফেরা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যদিও একটি প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে- তার দেশে ফেরার পথে বাধা কী? গত এপ্রিলে ব্রিটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ তারেক রহমানকে নিয়ে ‘ডেস্টিনি’স চাইল্ড’ বা ‘নিয়তির সন্তান’ শিরোনামে একটি কভার স্টোরি করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছিল, তখন তারেক রহমানই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। পত্রিকার নয়াদিল্লি ব্যুরোপ্রধান নম্রতা বিজি আহুজা সেখানে লেখেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ’
জাতিকে এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন এমন নেতা বাংলাদেশে বেশি নেই। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের উপস্থিতি অতীব জরুরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, জাতি, রাষ্ট্র এবং জনগণের সংকটে দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ও লেখক আমীন আল রশীদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে দল ও দেশের মানুষ চাইলেও তার পক্ষে রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনা করা কঠিন হবে।
বয়সের চেয়েও বড় সমস্যা তার শারীরিক জটিলতা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অনেকগুলো বড় অসুখে ভুগছেন। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচন যেদিনই হোক, সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, সংসদীয় পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম দায়িত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়াটাও কঠিন হবে বলে মনে হয়।
তার মানে দলের দ্বিতীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) হিসেবে তার ছেলে তারেক রহমানই যে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন- সেটি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি অন্য দল এমনকি যারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আছেন, সম্ভবত তারাও মনে করেন। ’
তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে এতদিন আলোচনায় থাকা তিনটি প্রধান বাধা ছিল—চারটি মামলায় সাজা, পাসপোর্ট জটিলতা ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মামলাগুলোর রায় এখন তার পক্ষে এসেছে। তবে পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক এখনো আছে।
২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর তার পাসপোর্ট নবায়ন হয়নি। তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-মেয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ‘সারেন্ডার’ করেছেন।
বিএনপি দাবি করেছিল, পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলে তা দেখাতে হবে। কিন্তু সরকার সেটি কখনো প্রকাশ করেনি। বর্তমানে তার হাতে বৈধ পাসপোর্ট নেই, ফলে নতুন করে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন আর পাসপোর্ট পাওয়া তেমন কঠিন হবে না।
সব মামলায় খালাস পাওয়ার পর তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কেবল একটি বিষয়ই গুরুত্ব পাচ্ছে-নিরাপত্তা। এর আগে এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকালে তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরও তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিতে জোর দেন। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপরও কিছুটা নির্ভর করবে।
নির্বাচনের একটা পরিষ্কার রোডম্যাপ দিতে হবে। উনার মতো এত বড় একজন নেতার নিরাপত্তার ব্যাপারও আছে। যখন অন্তর্বর্তী সরকার একটা স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি দিতে পারবে, উনার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারবে তখন তিনি আসবেন। ’ সে সময় তিনি আরো জানান, ‘উনি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তা না।
তবে আমি যেটা বলছি, উনার মতো একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, যাকে দেশের ভেতরে এবং বাইরে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই তার কিছু আন্তর্জাতিক সিকিউরিটির ব্যাপার-স্যাপার আছে। ’
তারেক রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি আবারও সামনে আসে গত ২৭ মে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতারের পর। এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করার মিশন নিয়ে নেমেছিল সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদরা। এতে অর্থ জোগান দিচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সুব্রত বাইনকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডনে পাঠিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। টার্গেট ছিল তারেক রহমানের জুমার নামাজে যাতায়াতের সময়। এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও।
এর আগে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান দেশে আসার আগেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। চিঠিতে তার বাসভবনের পাশাপাশি বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রেও গাড়িসহ পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের স্ত্রী হিসেবে তার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। চিঠিতে চার ধরনের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল- সশস্ত্র গানম্যান, গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশি পাহারা ও বাসায় আর্চওয়ে স্থাপন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা রয়েছে কি না—এই প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে কোনো সরাসরি মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে আসন্ন শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছেন তারেক রহমান।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারের শীর্ষ মহলের উদ্যোগেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েনের সময়েই এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনায় নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান উত্তরাধিকার সূত্রেই বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তাকে রাজনীতিতে আনতে দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের একটি পদ তৈরি করা হয়েছিল।
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার মতো তার বড় ছেলে তারেক রহমানও গ্রেফতার হন। মুক্তি পাওয়ার পর স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের মাঝে আর দেশে ফিরতে পারেননি।
তারেক রহমান লন্ডনে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমলে তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়। তার অনুপস্থিতিতে পাঁচটি মামলায় সাজাও দেওয়া হয়। এরমধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তাকে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
তারেক রহমানের মামলার নিষ্পত্তি, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে কার্যত নিষ্ক্রিয়তা, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন- সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোরালো আলোচনার বিষয়, ৫ আগস্টের আগেই কি সত্যি দেশে ফিরছেন তারেক রহমান? যদিও তার ফেরার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ কেউ জানাতে পারছেন না, তবে সবকিছুই যেন ইঙ্গিত করছে, ফেরার দিন খুব বেশি দূরে নয়।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২১:২১
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৃষ্ট সব বর্জ্য অপসারণ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
ডা. মওদুদ হোসেন বলেন, ৩০০ ফিটসহ এয়ারপোর্ট রোড ও সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
এর আগে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে প্রিয় জন্মভূমির মাটিতে পা রেখেই এক আবেগঘন মুহূর্তের অবতারণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই তিনি প্রথমে খালি পায়ে দেশের মাটি স্পর্শ করেন এবং পরম মমতায় হাত দিয়ে একমুঠো মাটি তুলে নেন। দীর্ঘ দেড় যুগের প্রতীক্ষার পর মাটির এই স্পর্শ উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে এক আবেগপ্রবণ পরিবেশ তৈরি করে।
বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমান একটি লাল রঙের সুরক্ষিত বাসে চড়ে পূর্বাচলের ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) সংলগ্ন গণসংবর্ধনাস্থলে যান। সেখানে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশে তিনি তার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ভাষণ দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৃষ্ট সব বর্জ্য অপসারণ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল।
ডা. মওদুদ হোসেন বলেন, ৩০০ ফিটসহ এয়ারপোর্ট রোড ও সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
এর আগে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে প্রিয় জন্মভূমির মাটিতে পা রেখেই এক আবেগঘন মুহূর্তের অবতারণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই তিনি প্রথমে খালি পায়ে দেশের মাটি স্পর্শ করেন এবং পরম মমতায় হাত দিয়ে একমুঠো মাটি তুলে নেন। দীর্ঘ দেড় যুগের প্রতীক্ষার পর মাটির এই স্পর্শ উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে এক আবেগপ্রবণ পরিবেশ তৈরি করে।
বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমান একটি লাল রঙের সুরক্ষিত বাসে চড়ে পূর্বাচলের ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) সংলগ্ন গণসংবর্ধনাস্থলে যান। সেখানে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশে তিনি তার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ভাষণ দেন।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৬:৪১
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন-আই হ্যাভ এ ড্রিম। তেমনি আমিও বলছি-আই হ্যাভ এ প্ল্যান।আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনাদের প্রত্যেককে কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, আজকেই এই মঞ্চে আমাদের সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও আছেন। আমি আমার দলের নেতৃবৃন্দ, দেশবাসী ও সমমনা নেতাদের নিয়ে সুন্দর শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ব।
রাজধানীর ৩০০ ফিটে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন-আই হ্যাভ এ ড্রিম। তেমনি আমিও বলছি-আই হ্যাভ এ প্ল্যান।আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনাদের প্রত্যেককে কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, আজকেই এই মঞ্চে আমাদের সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও আছেন। আমি আমার দলের নেতৃবৃন্দ, দেশবাসী ও সমমনা নেতাদের নিয়ে সুন্দর শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ব।
রাজধানীর ৩০০ ফিটে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:২১
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে সকালেই জড়ো হয়েছেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। এর মধ্যে একটি অংশ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে দুই সারিতে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বদেশে স্বাগত জানাতে রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকালেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা গেছে।
সকালের আলো ফোটার পর থেকেই হেঁটে হেঁটে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণসংবর্ধনাস্থলে আসেন তারা।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করেন ৬০ বছর বয়সি তারেক রহমান। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করছেন, ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। লন্ডন থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয় তারেক রহমানকে। ১৮ মাস কারাগারে থাকার সময় অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তারেক রহমান। এক সপ্তাহ পরে, ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি।
প্রবাসে থাকা অবস্থাতেই ২০১৫ সালে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার জানাজায়ও শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি। মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন দীর্ঘদিন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের এবং দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির নেতাদের মতে, তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক বার্তা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা করে তুলেছে। তার আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বাসভবন ও অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নম্বর ভবনে উঠবেন তারেক রহমান। এই বাসার পাশেই ভাড়া করা বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারও তৈরি করা হয়েছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে যেখান থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে সকালেই জড়ো হয়েছেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। এর মধ্যে একটি অংশ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে দুই সারিতে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বদেশে স্বাগত জানাতে রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকালেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা গেছে।
সকালের আলো ফোটার পর থেকেই হেঁটে হেঁটে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গণসংবর্ধনাস্থলে আসেন তারা।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করেন ৬০ বছর বয়সি তারেক রহমান। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করছেন, ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। লন্ডন থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয় তারেক রহমানকে। ১৮ মাস কারাগারে থাকার সময় অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তারেক রহমান। এক সপ্তাহ পরে, ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি।
প্রবাসে থাকা অবস্থাতেই ২০১৫ সালে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার জানাজায়ও শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি। মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন দীর্ঘদিন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের এবং দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির নেতাদের মতে, তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক বার্তা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা করে তুলেছে। তার আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বাসভবন ও অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশান এভিনিউর ১৯৬ নম্বর ভবনে উঠবেন তারেক রহমান। এই বাসার পাশেই ভাড়া করা বাসা ‘ফিরোজা’য় থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারও তৈরি করা হয়েছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আলাদা চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে যেখান থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.
Google AdSense
This is a demo ad. Your live ads will be displayed here once AdSense is properly configured.