৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

জিন আতঙ্কে অসুস্থ্য ৫০ শিক্ষার্থী, স্কুল বন্ধ ঘোষণা

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:১২ অপরাহ্ণ, ১২ আগস্ট ২০১৭

ভোলার লালমোহন উপজেলায় কথিত জিনের আতংকে চার দিন ধরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে। গত এক সপ্তাহে এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় সাত দিনের স্কুল বন্ধ ঘোষনা করে উপজেলা প্রশাসন।

অভিযোগ উঠেছে, দুপুর ১২টা বাজলেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এ সময় তারা অস্বাভাবিক আচারণ করতে থাকে। এদিকে জিনের আতংকে আতংকিত হয়ে পড়েছে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। ভয়ে অনেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনা উৎঘটনে ৭দিনের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, এটি মানুষিক সমস্যা বলে ধারনা করা হলেও বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে শিক্ষার্থীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।

শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ শত ছাত্র ছাত্রী পড়ালেখা করে আসছে। গত এক সপ্তাহ আগে হঠাই করেই কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। স্কুল চলাকালীন সময়ে দুপুর ১২টা বাজলেই এভাবে শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হওয়ার বিষয়টি আতংকে রুপ নেয়। পরে স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসা পেয়ে শিক্ষার্থীরা সুস্থ্য হলেও উঠলেও অন্যরা একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছে। কিছুতেই শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হওয়ার কারণ উদঘটন হচ্ছে না।

স্কুলের শিক্ষক ও আক্রান্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তাদের শরীরে খিচুনি দেখা দেয় এবং অস্বাভাবিক আচারণ করতে থাকে। এমন হলেই তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ পর্যন্ত ৫০ জনের মত শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।

এদিকে শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হওয়ার বিষয়টিকে স্থানীয়রা জিনের আছড় বলে প্রকাশ করে। যে কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও আতংক বাড়তে থাকে। অসুস্থ্যদের জন্য খনকার ও কবিরাজ এনেও কোন ফলপ্রসু হয়নি বলে জানায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

তবে অভিভাবকরা অসুস্থ্যদের লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বুধবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত ৫০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে অনেক ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদ সিকদার বলেন, গত ৩ থেকে ৪ মাসে আগে কয়েক শিক্ষার্থী হঠাৎ করেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলো। তাদের নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। পরে ম্যানেজিং কমিটির ও শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে স্কুলে খনকার এনে বন করা হয় এরপর থেকে ভালো ছিলো।

কিন্তু ইদানিং আবার সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে তবে কি কারনে তা বলা যাচ্ছে না। জিনের আতংকে স্কুলের শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। তবে যারা অসুস্থ্য হচ্ছে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সন্তোষ কুমার সরকার বলেন, এ পর্যন্ত যারা অসুস্থ্য হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সকলে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, স্কুলের চিক্ষার্থীদের মধ্যে ম্যাস সাইকোসিস ডিজিস নামে আমাদের ধারনা, সেটা দুই বছর আগে আফ্রিকান কান্টিতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমটি হয়েছিলো।

আর যদি তা না হয় তবে আমাদের ধারনা, কেউ এই পরিবেশটাকে শিশুদের মাঝে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যারফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ঢুকে ওই আতংকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা স্কুলে এসেই সেই বিষয়টি কল্পনা করে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুল আরেফিন বলেন, এটি জিনের আচড় হতে পারে না, তবে শিক্ষার্থীরা কেন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে তা আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। বর্তমানে সিমটমটা বেশী থাকায় ৭দিনের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আশা করি সাত দিনের মধ্যে কারন উদঘাটন করা হবে।

এদিকে চারদিন ধরে বন্ধ থাকায় পূর্ব কচুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছেনা শিক্ষার্থী।

আরও ৩ দিন পর মঙ্গলবার স্কুল খুলবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তখন চিকিৎসকদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করা হবে। খুব শিগ্রই এ সমস্যা থাকবে বলেও জানান তিনি।”

 

10 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন