২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনা ভাইরাস ও স্বাস্থ্যখাতের বাস্তব চিত্র ।। মনিরুজ্জামান

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ০৯ মে ২০২০

অতিথি কলাম লেখক:: লেখার শুরুতেই একটা কথা না লিখে পারছি না। আমার একটা ছোট ভাই সবে মাত্র ফেসবুকের সুবাদে ২/৪ কলম লিখে। ওর দুটো লাইন আমার খুব পছন্দ হয়েছে। “ নেতারা ইতিহাসের পাতা উল্টায়, আর জনগণ সে পাতার নিচে চাপা পরে মরে, এটাকে বলা হয় চাপাবাজী”। কথাটি যেমন ই হোক না কেন, বাস্তবতা কিন্তু সত্যি। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিতেই আসল চিত্র ফুটে উঠলো। যখন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ এ করোনা টেষ্ট মেশিন বসানো হলো পরদিনই পত্রিকায় আসলো মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম রাজা চাকরী থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হলো তার ইস্তফা দেয়াটা এতোটা জরুরি কেন হয়েছিল? কারণ তিনি জানেন স্বাস্থ্যখাতের বাস্তব চিত্র। ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার ! যেখানে একজন ডাক্তার সেবা দিতে ভয় পাচ্ছেন তাহলে আমাদের মত হতদরিদ্র মানুষ ভরসা রাখবো কোথায়?

করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম। এরপর ধারাবাহিক ভাবে সমগ্র্র বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পরেছে। সঠিক তথ্য কেহই জানিনা যে টুকু মিডিয়ায় প্রকাশ করে জনগণ তা এখন আর বিশ্বাস করে না। প্রকাশিত সংবাদপত্রের কলামে দেখা যায় করোনা রোগী তালতলা গোরস্থানে মাটি দেয়ার জায়গা নেই। এখন রায়ের বাজার গোরস্থানে দাফন শুরু হয়েছে। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়াল? মাত্র ১৯১ টি লাশের জায়গাই যদি তালতলায় থাকবে, তাহলে পূর্বে কেন এটাকে নির্ধারণ করেছিলেন?
অনেক প্রশ্নই জন্ম দেয় কিন্তু সদুত্তর পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের এত এত হাসপাতাল থাকতে কেন নতুন করে বসুন্ধরার কনভেনশন হলকে মেডিকেলে রূপান্তর এর জন্য উঠে পরে লাগলো? বিশ্ব মিডিয়ায় নিজেদের জাহির করাই কি মূল উদ্দেশ্য?
নামী দামি অনেক হাাপাতালকে ব্যবহার করা যেত বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে।

জনগণ মূহুর্তের মধ্যে বিশ্বের সকল খবরা খবর জানতে পারছে। এখন আর সাদা ছাগলের গায়ে কালো রং করে উপস্থাপন করাটা অত সহজ সাধ্য বিষয় নয়। মানুষের মানবিকতা বোধ লোপ পেয়ে অমানবিক হয়ে উঠেছে। সন্তান তার পিতা মাতাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়, স্থ্রী তার স্বামীকে ঘরে তুলে না করোনা সন্দেহে। তাহলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে বুঝতে হবে।
যে টুকু আশার আলো দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের ছয়টি কোম্পানি কে রেমিডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে যাহা করোনার চিকিৎসায় প্রাথমিক ভাবে কার্যকরী নাকি?

কিন্তু পূর্ব মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রতি ভায়াল ৫-৭ হাজার টাকা করে। এক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের পক্ষে এটা ব্যবহার উপোযোগী বলে মনে হয় না। আগে থেকেই সরকার প্রনোদনার মাধ্যমে গণমূখী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেয়ার চিন্তা করা উচিত বলে মনে করি। লকডাউন এর নামে যে ছেলে খেলা হচ্ছে তাতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি বলে মনে করি। যে দিন ছয় জন আক্রান্ত হলো সেদিন লকডাউন শুরু কিন্তু যেদিন সাতশতের অধিক আক্রান্ত সেদিন আংশিক লকডাউন তুলে নেয়া হলো। এটা কেমনতর বিষয় বোধগম্য নয়। আমরা কতটা স্বাস্থ্য সচেতন তা কি কারো অজানা বিষয়?

মার্কেট আংশিক খোলা রেখে ব্যবসায়িরা উপকৃত হবেন ঠিক কিন্তু মৃত্যুর মিছিলে যোগ হবে অগুনিত লাশ তাতে কোন সন্দেহ নেই। গার্মেন্টস থেকেও মহামারীর বিস্ফোরণ ঘটলো বলে শুধু সময়ের অপেক্ষা।  শুধু মাত্র আন্তঃজেলা ও সমগ্র বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিকরাই যতটুকু কষ্টে আছেন। তাদের আর কষ্ট দিয়ে কি লাভ? সেটা লকডাউন তুলে নিলেই লেটা চুকে গেল। তাহলেই ষোলকলা পূর্ণ হবে।

বিশেষ করে বরিশালের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় যথেষ্ট সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু আমরা চোর পুলিশ খেলার মত করে অপ্রয়োজনে বাহিরে বের হচ্ছি প্রয়োজনে অপ্রয়োজনেও। আর ফলাফল যা হবার তাই প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা। এখন আমাদের বেঁচে থাকার পথ শারীরিক শক্তি স্বামর্থ অর্জন করা আর প্রতিষেধক এর জন্য অপেক্ষা করা। কারন এছাড়া মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়াটা কঠিন। আমরা সচেতন হতে পারিনি, আমরা স্বাস্থ্য অসচেতন।

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভংগুর। অনেক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান বলছেন তাদের দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার টেষ্ট বানিজ্য হতো প্রতিদিন। এখন রোগী নেই টেষ্ট ও নেই। খুব কষ্টের মধ্যে আছেন তারা। তাহলে প্রশ্ন হলো দেড় থেকে দু মাসের মধ্যে অন্য সকল রোগ কি বিদায় নিয়ে গেল বাংলাদেশ থেকে? যদি তাই না হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে টেস্ট বানিজ্যের নামে এসকল নামি দামি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গুলো মানুষকে ঠকিয়েছে এবং ঠকাচ্ছে। আর তার একটা বিরাট অংশ চিকিৎসকগনই নিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আজ এই করোনা কালে সে সকল চিকিৎসকগনের ভূমিকা কি?

বৃক্ষ তোমার নাম কি ফলে পরিচয়। সকল চিকিৎসকগণকে বললে ভুল হবে। কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবেও অনেক চিকিৎসক দেখেছি নিজের জীবন বিপন্ন করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। করজোড়ে প্রণাম তাদের কে যারা মহামারী প্রাক্কালে জোর ভূমিকা রাখছেন স্বাস্থ্য খাতে।
৮/৫/২০২০
@ s.moniruzzaman99@gmail.com

6 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন