২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বরিশাল বৃক্ষমেলায় সকলের নজর কাড়ছে নৌকা আকৃতির গাছ

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০২:১৫ পূর্বাহ্ণ, ০১ আগস্ট ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালে চলমান পক্ষকালব্যাপী বৃক্ষমেলায় নানা রঙ বাহারের গাছের সমাহারে সৃষ্টি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক পরিবেশ। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এই মেলার সৌন্দর্যের জ্যোতি ছড়াচ্ছে নৌকা আকৃতির একটি গাছ, মালফুজিয়া। বিরল প্রজাতির এই গাছটি বয়স প্রায় ৮ বছরের কাছাকাছি। নার্সারি মালিক পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার মানিক হোসেন বাহাদুরের ভাষায়- পাতাবাহার ধরনের এই গাছটি জন্মের পরই নৌকা আকৃতিতে পরিণত করতে মনোনিবেশ করেন। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে একনিষ্ঠ ভক্ত ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থেকে এই এই সংগঠনের প্রতীক নৌকাকে জীবন্ত রুপ দিতে আড়াই হাত উচ্চতার মালফুজিয়া গাছটির পেছনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন।

সময় যায়, নতুন দিন আসে গাছটি রুপ ও সৌন্দর্যে নৌকা সদৃশ্য লাভ করতে থাকে। দেখলে মনে হয় যেন এতটি বৃক্ষতারার ওপর নৌকা সাজানো হয়েছে। পাশে বৈঠা সেই নৌকাকে সৌন্দর্যের আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়।

২৫ জুলাই থেকে শুরু এবারের বৃক্ষমেলায় বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রত্যাশারও বাইরে প্রতিদিন বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু শহর নয়, আশপাশ গ্রাম থেকেও বৃক্ষপ্রেমীরা আসছে, সাথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের মনপুত নানা বাহারী রঙের গাছ। তবে এবারের বৃক্ষমেলায় ব্যতিক্রম এখানেই ফলবান গাছের চেয়ে ঘর সাজানো অর্থাৎ ছোট্ট ফুলের বাগান তৈরির জন্য নানা প্রতিজাতির গাছের বিশেষ চাহিদা। কোন গাছ নেই? এই প্রশ্নে উত্তরে বলা যায়- সব গাছেরই যেন সমাহার ঘটেছে এবারের বৃক্ষমেলায়। সেখানে ‘মালফুজিয়া’ গাছটি হয়ে উঠেছে সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

বৃক্ষলোয় প্রবেশের পরেই সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- মেলা মাঠের মধ্যবর্তী স্টল নেছারাবাদ নার্সারিতে উৎসুক মানুষের ভিড়। দু’কদম এগিয়ে জানা গেল কিছুই ঘটেনি কিন্তু অদ্ভুত গাছ ও তার সৌন্দর্য ও রুপ আকৃতি বৃক্ষপ্রেমীদের বিমোহীত করেছে।

সৌন্দর্যে সকলে এতটাই আকর্ষিত যে গাছটির সাথে পরন্ত বিকেলে সেলফি তুলতে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এই খবর বাইরে ছড়িয়ে এমন অনেকে আছেন, যারা গাছ কিনতে আগ্রহী নন, তারা মেলায় আসছেন এবং ফিরে যাওয়ার সময় নিয়ে যাচ্ছে একটি বৃক্ষ।

নেছারাবাদ নার্সারির মালিক মানিক হোসেন বাহাদুর অকপটে স্বীকার করলেন গাছটির প্রতি তার অঘাত মায়া। কিন্তু তিনি ব্যবসায়ী তাই গাছটি বিক্রি করতে চান। দাম হাকিয়েছেন সোয় দেড় লাখ টাকা।

তার ভাষ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ করেন এমন অনেকে এসেছে এবং গাছটি নিয়ে দাম-দর করেছেন। কিন্তু ব্যাটে বলে না মেলায় বিক্রি হয়নি। তবে তার আক্ষেপ নেই, বরং তিনি দিন যত যাচ্ছে আরও পুলকিত হচ্ছেন।

মালফুজিয়াকে দেখতে তার স্টলে যেমন ভিড় বাড়ছে, তেমন অন্যান্য গাছ বিক্রি হচ্ছে। তিনি গাছটিকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যে ঘরের ড্রইং রুম থেকে বাড়ির সামনে খোলা বাগানের মাঝে অথবা কোন প্রবেশদ্বারের পাশে পাতাবাহর আকৃতির এই গাছটি বসানো হয় সেখানে সৌন্দর্যে নতুন এক সংযোজন ঘটবেই।

প্রশ্ন করা হয়েছিল গাছটি জন্ম থেকে এ পর্যন্ত নৌকা সদৃশ্য করতে কী করতে হয়েছে- উত্তরে তিনি জানান- পর্যাপ্ত সার ব্যবহারের পাশাপাশি কাটছাঁট করে বৈঠা সমেত রুপ আনতে দেখতে দেখতে তার আট বছর পেড়িয়ে যায়। তিনি গত বছরই টার্গেট করেছিলেন এবারের বৃক্ষমেলায় চমক হিসেবে মালফুজিয়াকে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে আসবেন। এনেছেন এবং সফলও হয়েছেন। কারণ এই মালফুজিয়ার কারণে এখন তিনি বৃক্ষমেলার নায়ক। কোন বাড়িতে লাগানো যায় এবং কীভাবে লাগাবেন তার কাছে আর কী দুর্লভ গাছ আছে বৃক্ষপ্রেমীদের এমন বেকুলতার প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন।

মালফুজিয়া কিনুক আর না কিনুক অন্য গাছ ক্রয়ের পর আবার এসে থমকে দাড়ায় সেই মালফুজিয়ার পাশে। যাবার সময় তুলে নিয়ে যান সেলফি। এ এক অন্যান্য দৃশ্য যা না দেখলে অনুমান করা যাবে না। এবারের বৃক্ষমেলায় ২৪ টি স্টল অর্থাৎ বিভিন্ন নর্সারি তাদের গাছ উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে সরকারি ৫ স্টলও রয়েছে।

নার্সারি মালিকদের অভিমত এবারের বৃক্ষমেলায় নেছারাবাদ নার্সারির মালফুজিয়া গাছটির কারণে বৃক্ষপ্রেমীদের ভিড় একটু বেশি এবং বিক্রি খারাপ নয়। মেলায় আগমনের পরে সবাই ছুটছে মালফুজিয়ার দিকে।

এই দৃশ্যে অন্যান্য নার্সারি মালিকেরা পুলকিত। বিকেল হলেই দেখা যায়- বৃক্ষপ্রেমীরা ধীরে ধীরে মেলায় আঙিনায় ঘিরে দাঁড়িয়ে আসছে। এবং খুঁজছে ঘর সাজাতে দুর্লভ প্রজাতির গাছ আর উদাহরণ টানছে মালফুজিয়াকে।

ইতিমধ্যে আলী আকবর নামে এক আওয়ামী লীগ প্রেমী এসেছিলেন নৌকা সাদৃশ্য মালফুজিয়াকে নিজ আঙিনায় নিয়ে যেতে। দাম হাকিয়েছিলেন ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু নাছড়বান্দা নার্সারি মালিক মানিক হোসেন বাহাদুর সোয়া লাখ টাকার নিচে দিতে নারাজ। তার কথার ধরন দেখে অনুমান করা গেল গাছটি বিক্রি না হলেও তার কোন আফসোস নেই। এক কথায় বলা যায় গাছটি বিক্রিতে তিনি অতটা আগ্রহী নন। মূলত তিনি তার স্টলে বৃক্ষপ্রেমীদের টানতে সম্মুখভাগে গাছটি রেখে তিনি কৌশল এটেছেন। সেখানেও তিনি সফল।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়- অপরাপর স্টলের থেকে তার গাছ বিক্রির সংখখ্যা অনেক বেশি। সর্বশেষ জানা গেল বরিশালের বৃক্ষমেলায় নৌকা সদৃশ্য মালফুজিয়ার সৌন্দর্যে কথা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও অবগত হয়ে কেউ কেউ নিরবে এসে উপভোপ করে যাচ্ছেন, ক্রয়ের উদ্দেশে দরদাম কষছেন। আগত অনেকের ভাবনা গাছটি ক্রয় করে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে উপহারস্বরুপ পাঠানো যায় কী না। কৌশলী নার্সারি মালিক মানিক হোসেন বাহাদুরের এই চিন্তা চেতনা উপলব্ধি করতে পেরে তিনিও চাচ্ছেন তার মূল্য চাহিদা পূরণ করে কোন বৃক্ষপ্রেমীর হাত ধরে মালফুজিয়া পৌঁছে যাক প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

মেলার আয়োজক বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ এই দুটি দপ্তরেও মালফুজিয়াকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। একজন বন বিভাগের কর্মকর্তা প্রত্যাশার ঢেকুর গিলে জানালেন বৃক্ষমেলা শুরুর ৫ দিনেই এবারের আয়োজনকে সফল বলে আভাস পাচ্ছেন। সেখানে নৌকা আকৃতির মালফুজিয়াকে একটি টনিক হিসেবে মনে করছেন। কারণ মালফুজিয়ার কারণেই বৃক্ষমেলায় লোকেলোকারণ্য। পরন্ত বিকেল থেকে ৮ টা পর্যন্ত মেলা মাঠ বঙ্গবন্ধু উদ্যোনে মানুষের কোলাহলে ভিন্ন এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেখানে হাঁটতে মালফুজিয়ার গল্পই শুধু শোনা যায়।’

5 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন