৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

ভুক্তভোগীকে বেকায়দায় ফেলতে কৌশলী ধর্ষণকারী শোভন: আদালতে কল্পিত অভিযোগ, দাবি তরুণীর

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৭:৪২ অপরাহ্ণ, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভুক্তভোগীকে বেকায়দায় ফেলতে কৌশলী ধর্ষণকারী শোভন: আদালতে কল্পিত অভিযোগ, দাবি তরুণীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: বরিশালে ধর্ষণ মামলার বাদী তরুণীকে বেকায়দায় ফেলতে অপকৌশল প্রয়োগ করেছেন তার প্রেমিক মাহামুদুল হাসান শোভন, যিনি কী না এক সময়ে ইউনিলিভার কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তরুণীর মামলার প্রেক্ষাপটে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল। গত ১২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেছিলেন শোভনের তৎকালীন নারী সহকর্মী।

তরুণীর অভিযোগ, বরিশাল নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের সাগরদীর উত্তর খালপাড় সড়কের হারুন অর রশিদের ছেলের মাহামুদুল হাসান শোভন তার সাথে উপজেলা পরিষদের যুব উন্নয়নের আওতাধীন এনএসপি প্রকল্পে কাজ করতেন। ওই সময় তাদের মধ্যে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক তৈরি হয় এবং কিছুদিন পরে তরুণীকে তিনি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

এই ধর্ষণ মামলার বাদী তরুণীর বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী সাজিয়ে আদালতে নালিশী অভিযোগ করেছেন ধর্ষণকারী শোভনের বাবা হারুন অর রশিদ। গত ৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৭ (গ) ধারায় অভিযোগটি করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শহরের চৌমাথা এলাকায় বসে এর একদিন আগে অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর তার ছেলে শোভনের ওপর গুন্ডাবাহিনী নিয়ে মাসমেত তরুণী হামলার চেষ্টা করেন। এবং পর্যায়ে হামলায় ব্যর্থ হলে তরুণীর মা তার মেয়েকে বিয়ে না করলে শোভনকে খুন জখমের হুমকি দেন।

ধর্ষণকারী প্রেমিকের বাবার এমন কল্পকাহিনী মিশ্রিত অভিযোগ আদালতে উপস্থাপনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী। তিনি পাল্টা অভিযোগে বলছেন, থানায় ধর্ষণ মামলার পর শোভনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এই মামলা তুলে নিতে প্রেমিক শোভন কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় তার স্বজনেরা তরুণীকে হুমকি দেয়। এমনকি শোভন কারামুক্ত হয়ে তিনিও মোবাইলে একাধিক ভয়ভীতি সংবলিত মেসের পাঠান। এসব ঘটনাবলী উল্লেখ করে এবং এর প্রতিকার চেয়ে তরুণী ৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন, যা পুলিশের এসআই পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। এছাড়া তরুণীর করা ধর্ষণ মামলাটিও তদন্তধীন আছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি বিপ্লব কুমার মিত্র জানান, মোকাদ্দমার তদন্ত কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব শিগগিরই মামলাটির প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

এরই মধ্যে ধর্ষক ছেলের ওপর মাসহ তরুণীর বিরুদ্ধে হামলা চেষ্টা ও জীবননাশের হুমকি অভিযোগ আনলেন পিতা হারুন অর রশিদ। আদালতে নালিশী অভিযোগে বিষয়ে জানতে বাবা হারুন অর রশিদ এবং তার ছেলে শোভনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

তবে তরুণী বলছেন, ধর্ষণ মামলা থেকে রেহাই পেতে শোভন এবং তার পরিবার একের পর এক গুটি চালছেন। হুমকি-ধামকি দিয়ে মামলা ওঠাতে ব্যর্থ হয়ে এখন অপকৌশল প্রয়োগের ধান্দায় মেতেছেন, কল্পকাহিনী সাজিয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যে অভিযোগ করে হয়রানি করতে চাইছেন। বাদী জানান, তার মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে শোভন কোথায় আছেন তা তিনিও জানেন না। কিন্তু তার বাবা ছেলের ওপর হামলা চেষ্টার অভিযোগ এনে
আদালতে হয়রানিমূলক নালিশী করেছেন। এই বিষয়টি ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার মিত্রকে অবহিত করা হয়েছে।

তরুণী অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালে বরিশাল উপজেলা পরিষদের যুব উন্নয়নের আওতাধীন এনএসপি প্রকল্পে কাজ সুবাদে সাগরদী এলাকার শোভনের সাথে পরিচয় হয়, তিনি একই প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক তৈরি হলে শোভন তাকে বিয়ে প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যান এবং স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় থাকতে শুরু করেন। শহরের ২৩ নং ওয়ার্ডস্থ তরুণী বাসায় তার বাবা-মায়ের অবর্তমানে শোভন প্রায়শই যেতেন এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। এবং বিয়ে করমু, করছি, করে তরুণীর সাথে টালবাহনা করে আসার মধ্যেও চলতি বছরের ১ জুলাই রাতে তরুণীর বাসায় গিয়ে ফের অনুরুপ প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এর আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তরুণীকে নিয়ে শোভন শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান।

অনেকটা বাধ্য হয়ে গত ১২ জুলাই প্রেমিক মাহামুদুল হাসানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তরুণী। এতে তিনি প্রেমিক শোভন ব্যতিত কাউকে না জড়ালেও হারুন অর রশিদ ছেলের পক্ষে করা অভিযোগে মাসহ তরুণীকে বিবাদী করেছেন। আদালত আগামী ১০ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে তরুণীকে অভিযোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছেন।

ধর্ষণ মামলা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে শোভন এখন কৌশল নিয়েছেন, আইনি সুবিধা পেতে তার বাবাকে ব্যবহার করে আদালতে মিথ্যে একটি নালিশী করেছেন, যা তিনি নির্ধারিত তারিখে বিচারকের সম্মুখে আইনজীবী নিয়ে খন্ডন করবেন।

এদিকে থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তরুণীর করা ধর্ষণ মামলার প্রতিবেদন চূড়ান্তের পথে। ৯(১) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারাটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত আছে। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারে।

এই সংক্রান্ত মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে থানা পুলিশের কর্মকর্তারা সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। অনেক ভাবনা-চিন্তা এবং যাচাই-বাচাই করে এমন অভিযোগ এজাহার করা হয়। সেক্ষেত্রে তদন্ত শেষে উল্লেখিত ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার উদাহরণই বেশি রয়েছে।’

31 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন