২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

আজ বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্য বদলের দিন

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ১২ জুন ২০২৩

আহমেদ মুন্না, বরিশাল:: বরিশালকে বলা হয় প্রাচ্যের ভেনিস। এই প্রাচ্যের ভেনিস নগরী অনেক আগেই দেশের অন্যতম সেরা সিটি কর্পোরেশনে পরিনত হতে পারতো। নূন্যতম ‘এ’ গ্রেডে উন্নীত হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। সিঙ্গাপুর হওয়া তো দূরের কথা, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এখনো ‘বি’ গ্রেডেই রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়; নাগরিক সেবা, উন্নয়ন, সুশাসন ও ব্যবস্থাপনাসহ সকল সূচকেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর একটাই কারণ। চালকের অদক্ষতা। অদক্ষ চালকের হাতে থাকা গাড়ি কখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। বরিশাল নগরীতে অনেক শাসনকর্তা এসেছেন। তবে এদের মধ্যে যদি বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসনকর্তা কে ছিলেন তবে আবালবৃদ্ধবনিতা নির্দ্বিধায় একবাক্যে যার নাম উচ্চারণ করেন তিনি শওকত হোসেন হিরন। হিরনের আমলকেই মনে করা হয় বরিশাল সিটির স্বর্ণযুগ।

হিরনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অঙ্গীকার নিয়ে এরপরে আরও দুইজন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তারা প্রয়াত হিরনের অভাব পূরণ করতে পারেননি। নগরবাসীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি। উল্টো তারা হিরনের প্রয়োজনীয়তা হাড়েহাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নগরবাসীকে। হিরনকে বিস্মৃত করা তো দূরের কথা; হিরনকে দেবতুল্য ও প্রাতঃস্মরণীয় বানিয়ে দিয়েছে তাদের ব্যর্থতা। তাদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতা মৃত হিরনকে জনতার কাছে আরও বেশি শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় করে তুলেছে।

হিরনের মৃত্যুর পরে কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর। এই ১০ বছরে সামনে আগানোর পরিবর্তে সব সূচকেই ২০ বছর পেছনে চলে গেছে বরিশাল নগরী। অযোগ্য মানুষ ১০ বছরের জন্য চেয়ারে থাকলে ক্ষতি হয় ২০ বছরের। দেশের অন্য সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় পিছিয়ে যায় ২০ বছর। এটা সরল একটা গানিতিক হিসাব। যার প্রমাণ দেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিভাগীয় শহর বরিশালের সিটি কর্পোরেশন এখনো ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়ে গেছে। এমনকি দেশের অনেক পৌরসভার চেয়েও নাগরিক সেবা, উন্নয়ন ও সুশাসনসহ বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ডে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। তাই এবার যদি বরিশাল নগরবাসী আগামী ৫ বছরের জন্য নগরপিতা নির্বাচনে আবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তবে আগামীতে বরিশাল পিছিয়ে যাবে আরও কমপক্ষে ১০ বছর।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা কিংবা কারো গুণকীর্তন করা নয়। কেবল বাস্তবতা তুলে ধরা। তিলোত্তমা বরিশাল গড়তে হলে আগামী ৫ বছরের জন্য সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে হবে আজ। আপনার ভোট আপনি দেবেন। কাকে দেবেন সেটা বলে দেওয়া অবৈধ। আপনার ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত অধিকার। তবে সেই অধিকারটা আপনি অবশ্যই দেখে, শুনে, বুঝে তারপরে প্রয়োগ করবেন।

মনে রাখবেন- আগামী ৫ বছরের মধ্যে শুধু আজকের একটি দিনের জন্য আপনি ক্ষমতার মালিক হয়েছেন। বাকি দিনগুলোর জন্য আপনি আরেকজনকে সর্বময় ক্ষমতা দিচ্ছেন। তাই এমন কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতা দেবেন না যার কাছে পরবর্তীতে আপনি নিজেই অসহায় হয়ে পড়বেন। আপনার মূল্যবান ভোট এমন কাউকে দেবেন না যার কাছে ভবিষ্যতে আপনি নিজেই মূল্যহীন হয়ে যাবেন। আপনার ভোট আপনি দেখে শুনে বুঝে যোগ্য প্রার্থীকে দেবেন। নগদ টাকার বিনিময়ে অথবা পরকালে জান্নাত পাওয়ার লোভে কিংবা কোনো ব্যক্তি বা দলের অন্ধ মোহে পড়ে আপনি যদি আপনার আজকের এই একদিনের ক্ষমতা উপযুক্ত জায়গায় প্রয়োগ না করেন তবে ভবিষ্যতে চরম মাশুলসহ সেই পরিনামফল কিন্তু আপনাকেই বছরের পর বছর ধরে ভোগ করতে হবে।

অতএব, আপনার ভোট আপনি দেবেন কিন্তু যাকে দেবেন সে ব্যক্তি যেন সৎ, যোগ্য, সুশিক্ষিত, নম্র-ভদ্র, মার্জিত, মানবিক এবং দেশপ্রেমিক হয়। এই গুণাবলী যার মধ্যে আছে আপনি তাকেই ভোট দেবেন। কোনো দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, ধর্মব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ, ভন্ড, প্রতারক, মিথ্যুক, লোভী, লম্পট, টোকাই, লুটেরা, বেয়াদব, সন্ত্রাসী, দখলবাজ, অসৎ কিংবা দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না। শুধু একটা কথাই মনে রাখবেন- আজকে যে ব্যক্তি নগদ টাকা কিংবা অন্য কোনো লোভ দেখিয়ে আপনাকে কিনতে এসেছে সে নির্বাচিত হলে আগামীকাল থেকেই আপনার সিটি কর্পোরেশনকে নিজের কেনা সম্পত্তি ভাবা শুরু করবে। আজ আপনি আপনার একটা ভোট বিক্রি করলে কাল সে নিশ্চিত আপনাকেসহ পুরো সিটি কর্পোরেশন বিক্রি করে দেবে। #

লেখক, আরিফ আহমেদ মুন্না
(সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও মানবাধিকারকর্মী)
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, বিমানবন্দর প্রেসক্লাব,
সাধারণ সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
বাবুগঞ্জ, বরিশাল।

129 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন