২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

বঙ্গবন্ধু এক মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনার নাম

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০২ অপরাহ্ণ, ১৪ আগস্ট ২০২২

বঙ্গবন্ধু এক মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনার নাম

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, সমগ্র একটি জাতির স্বপ্নকেই হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকরা। তারা বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছিল ঘোর অমানিশার অন্ধকারে। কিন্তু তারা হয়তো সেদিন জানতো না, বঙ্গবন্ধু তো দেশপ্রেমের এক মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনার নাম। বন্দুকের গুলিতে কি আর সেই চেতনার মৃত্যু ঘটে? সেদিন হয়তো ব্যক্তি শেখ মুজিবের প্রাণ কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল ঘাতকরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ছিলেন কোটি মানুষের মুক্তির স্বপ্ন আর দেশপ্রেমের চেতনার মূর্ত প্রতীক। যে চেতনার মৃত্যু নেই। যুগে যুগে যে চেতনা কোটি হৃদয়কে আন্দোলিত করে বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে প্রাণ সংহারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছিল খুনিরা। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাষ্ট্রনায়ককে হত্যার ঘটনা থাকলেও নারী ও শিশুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে একযোগে এমন নৃশংস হত্যার নজির নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা কলঙ্কিত এবং নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সেদিন উল্লাস করেছিল খুনিরা। এমনকি এই নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের কখনো যাতে বিচার না হয় সেজন্য সংসদে আইন পাস করে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত দেশি-বিদেশি চক্র এবং স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্তির প্রতিশোধের অংশ।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই দেশকে সেদিন অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হয়েছিল। লেখাপড়ার জন্য বিদেশে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ২১ বছর পরে আবার দেশের হাল ধরায় ফুটে ওঠে নতুন আলোর রেখা। নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে আবার আশায় বুক বাঁধে সাধারণ মানুষ। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তার উত্তরসূরি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণই এখন শেখ হাসিনা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই পথে অনেকটাই এগিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করে তিনি সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করে তিনি আত্মমর্যাদা এবং গৌরবের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

২০০৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। সঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অসীম। কারণ, আওয়ামী লীগ ছাড়া অতীতের কোনো সরকারই টানা একযুগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দীর্ঘ এই একযুগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের অজস্র অধ্যায় থাকলেও কিছু বড়বড় ব্যর্থতাও রয়েছে। কিছু ব্যর্থতায় সরকারের গর্ব করার মতো অসংখ্য অগণিত সাফল্যগুলো আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার রেকর্ড সৃষ্টি করলেও বেড়েছে শ্রেণি বৈষম্য। একটি শ্রেণি সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করছে। রাষ্ট্রের সম্পদ লুটে নিয়ে বিদেশে জমা করছে। দেশের সব সেক্টরে দুর্বৃত্ত সিন্ডিকেটের কারসাজি আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি। দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার।

এছাড়া আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিচ্যুতি এবং সরকারি প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রে লাগামহীন দুর্নীতির মহোৎসবে অনেকটাই অস্বস্তিতে সরকার। দেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বেকারত্ব। শিক্ষা শেষে কাজ পাচ্ছে না দেশের মূল চালিকাশক্তি যুবসমাজ। শিক্ষিত বেকারত্বের অভিশাপে এখন চরম হতাশাগ্রস্ত তারা। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ব্যবসায়ী এবং কালো টাকার মালিকরা এখন দখল করেছে রাজনীতি। টাকার বিনিময়ে তারা দলীয় পদ-পদবি এবং মনোনয়ন কিনে নিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দখলেই দেশের সিংহভাগ চেয়ার। ফলে সৎ ও ত্যাগী রাজনীতিবিদরা আজ কোনঠাসা এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য এক ভয়ঙ্কর অশনিসংকেত। এছাড়াও স্বাধীনতার বিপক্ষ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান এবং নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বপ্রথম সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রোধ করতে হবে। দুর্নীতির বিষবৃক্ষ মহীরুহতে পরিনত হওয়ার আগেই উপড়ে ফেলতে হবে। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জবাবদিহিতার অভাবে আজ দেশে দুর্নীতি বেপরোয়া। তাই সরকারের নির্বাহী এবং বিচার বিভাগসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অপরাধীরা যেন পার না পায় তার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সংবলিত একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই কেবল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সত্যি হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন কেবলই সুদূর পরাহত দুঃস্বপ্ন থেকে যাবে।

তাই এই আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে শুধু স্মরণ নয়, তাকে অনুসরণ করতে হবে। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বঙ্গবন্ধুকে চর্চা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সকল দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতোই চোখের সামনে অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি, জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। ‘নিজে অন্যায় করবো না, অন্যায় সইবো না’- বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারলে তবেই বাঙালির সত্যিকারের মুক্তি আসবে। ফিরে আসবে সুদিন। বিনির্মাণ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। #

লেখাঃ আরিফ উদ্দিন আহমেদ মুন্না (আহমেদ মুন্না)
সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও মানবাধিকার কর্মী।
বাবুগঞ্জঃ ১৫ আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।

13 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন