৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

বিজয়ের ৬দিন পরে পতাকা উড়েছিল গৌরনদীতে

বরিশাল টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:১৬ অপরাহ্ণ, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

২২ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়েছিলো বরিশালের গৌরনদী উপজেলা। দেশের মধ্যে সর্বশেষ বিজয় পতাকা উড়েছিলো গৌরনদীতে। অর্থাৎ বিজয় বিদসের ৬ দিন পরে মুক্ত হয়েছিল। টানা ২৮ দিন মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর যৌথ আক্রমণের পর গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পে অবস্থানরত শতাধিক পাকসেনা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো।

হানাদার বাহিনী গৌরনদীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হাজারো নিরীহ মানুষকে হত্যা ও কয়েক শতাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিলো।

ওই বছরের ২৫ এপ্রিল হানাদাররা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে এ জনপদে প্রবেশের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের প্রবেশের খবর শুনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা গৌরনদীর সাউদের খালপাড় নামকস্থানে তাদের প্রতিহত করতে অবস্থান নেয়।

হানাদাররা সেখানে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে। হানাদারদের সঙ্গে সেইদিন সম্মুখ যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন নাঠৈর সৈয়দ হাসেম আলী, চাঁদশীর পরিমল মন্ডল, গৈলার আলাউদ্দিন ওরফে আলা বক্স ও বাটাজোরের মোক্তার হোসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ওইদিন আটজন পাক সেনা নিহত হয়। এটাই ছিলো বরিশালে স্থলপথে প্রথম যুদ্ধ এবং এরাই প্রথম শহীদ।

ওইদিনের প্রত্যক্ষদর্শী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু সাংবাদিকদের জানান- ওইদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়তে থাকে পাকসেনারা। তাদের গুলিতে ওইদিন বহু লোক মারা যায়। গৌরনদী বন্দরসহ শত শত ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে হানাদাররা।

মে মাসের প্রথম দিকে গৌরনদী কলেজে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে পাকবাহিনী। বাটাজোর, ভুরঘাটা, মাহিলাড়া, আশোকাঠী, কসবাসহ প্রতিটি ব্রিজে পাক মিলিটারিদের বাঙ্কার ছিলো। উত্তরে ভুরঘাটা, দক্ষিণে উজিরপুরের শিকারপুর, পশ্চিমে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট, পূর্বে মুলাদি পর্যন্ত গৌরনদী কলেজ ক্যাম্পের পাক সেনাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো।

দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর পরাস্ত হয়ে মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাক সেনারা।

স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বশেষ হানাদার মুক্ত গৌরনদীতে ১৯৭৫ সালের ৭ মে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে হলেও দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও গৌরনদীতে আজও নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ।

গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে দ্রুত স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে র‌্যালি, আলোচনা সভা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মিলাদ ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।’’

8 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন